৬ বছর আগের ‘নোটবন্দি’ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়, ২০২৩-এ কতটা অর্থবহ

note

প্রায় ছ’বছর আগে নোটবন্দির (demonetisation) সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তার পর থেকেই চলে আসছে তর্ক-বিতর্ক। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ছিল বৈধ। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাস্তবিক ভাবে এই ছ’বছরে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের ধাক্কা শুষে নিয়েছে অর্থনীতি এবং সমাজ।

৬ বছর আগের নোটবন্দি

পুরনো ১০০০ টাকা এবং ৫০০ টাকার নোট বাতিল করার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে যে মামলাগুলি হয়েছিল, সোমবার সেগুলি খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। দীর্ঘ শুনানির পর ওই ৫৮টি মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে সর্বোচ্চ আদালত কার্যত জানিয়ে দিল, ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সিদ্ধান্তে কোনো ভুল ছিল না।

২০১৬ সালে দেশে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোটবন্দি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। ওই বছরের ৮ নভেম্বর, রাত ৮টা নাগাদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন, সাধারণের কাছে ৫০০ কিংবা ১০০০ টাকা থাকলে তা যেন ব্যাঙ্কে জমা করে দেওয়া হয়। আচমকা সেই নির্দেশে দেশজুড়ে শুরু হয়ে যায় হই হট্টগোল। প্রতিটি ব্যাঙ্কের সামনেই দেখা যায় লম্বা লাইন। বেশ কিছু অঘটনও ঘটে। এইসবের পরিপ্রেক্ষিতে পালটা সুপ্রিম কোর্টেও বেশ কিছু মামলাও দায়ের করা হয়। আর সেই সব মামলারই দীর্ঘ শুনানি চলার পর আজ রায় ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট।

এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে ৫৮টি পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল। বিচারপতি এস আবদুল নাজিরের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ দীর্ঘ শুনানির পর গত ৭ ডিসেম্বর এই মামলার রায় স্থগিত করে। বিচারপতি নাজির ছাড়াও সাংবিধানিক বেঞ্চের অন্য ৪ সদস্য হলেন- বিচারপতি বিআর গভই, এএস বোপান্না, ভি রামসুহ্মণ্যম এবং বিভি নাগরত্ন।

কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে সমর্থন সুপ্রিম কোর্টের

কেন্দ্রের নোটবন্দি প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে সুপ্রিম কোর্ট এ দিন বলে,সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ নয়। কারণ, যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েই কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছিল। সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে প্রায় ৬ মাস ধরে আরবিআই এবং কেন্দ্র আলোচনা করেছিল। অন্য দিকে, প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করার জন্য যে ৫২ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল, সেটাও নিতান্ত কম নয়।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, আনুপাতিকতার ভিত্তিতে নোট বাতিলের অনুশীলন বন্ধ করা যাবে না। নোটবন্দিকে চ্যালেঞ্জ করে যে ৫৮টি পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল, সেগুলি বাতিল করে দিল সর্বোচ্চ আদালত। সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ, কী ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা বিবেচনা করে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে পাল্টানো যায় না। তবে এই রায়ের বিপক্ষে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগরত্ন বলেন, ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোটের পুরো সিরিজ বাতিল করার জন্য একটি আইনের দরকার ছিল, একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নয়।

২০২৩-এ কতটা অর্থবহ এই রায়

নোটবন্দিতে যে সুপ্রিম কোর্টের বৈধতার সিলমোহর পড়তে চলেছে, সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল গত বছরের নভেম্বরের শুনানিতেই। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, এটি ‘ঘড়ির কাঁটা, ফেরানো যাবে না’। অর্থাৎ, নোট বাতিল করা যাবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছিল আদালত। তবে শীর্ষ আদালত আরও বলেছে, যুক্তিগুলি ভবিষ্যতে এই জাতীয় অনুশীলনের জন্য নির্দেশিকা তৈরি করতে পারে।

বাজারে নগদ লেনদেনের পরিমাণ কমানোই ছিল নোটবন্দির অন্যতম উদ্দেশ্য। ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোও ছিল নোটবন্দির উদ্দেশ্য। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, নোটবন্দির পর বাজারে নগদের জোগান বেড়েছে অনেকটাই। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর (নোটবন্দির চার দিন আগে) ভারতে জনতার হাতে নগদ ছিল ১৭.৭ লক্ষ কোটি টাকা। আর গত বছরের২১ অক্টোবরে তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০.৮৮ লক্ষ কোটি টাকা।

নোটবন্দির সিদ্ধান্ত গোটা দেশকে অবাক করে দিয়েছিল। ব্যাঙ্কের সামনে পড়েছিল লম্বা লাইন। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল সাধারণ মানুষকে। যার ধাক্কা এখনও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে ছোটো ব্যবসায়ীদের। তবে নোটবন্দির সপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বরাবর জাল নোটের কারবার নির্মূল করার কথা বলতে শোনা যায় মোদী-সহ অন্য বিজেপি নেতৃত্বকে। তবে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ২০২১-২২ আর্থিক বছরে দেশে জাল নোটের কারবার বেড়েছে আগের থেকে অনেকটাই বেশি। গত বছরের মে মাসে প্রকাশিত আরবিআই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে ৫০০ টাকার জাল নোটে ১০১.৯ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। ২০০০ টাকার জাল নোটের বৃদ্ধি ৫৪.১৬ শতাংশ। এ ছাড়াও ৫০০, ২০০০ টাকার জাল নোট এবং ১০, ২০, ২০০ টাকার জাল নোটের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেশি।

তা ছাড়া ছ’বছর আগের পরিস্থিতির সঙ্গে এখনকার চিত্র কোনো দিক দিয়েই মেলানো সম্ভব নয়। সে সময় নোটবন্দির ফলে অর্থনীতি এবং সমাজে যে ধরনের প্রভাব পড়েছিল, তা ভুক্তভোগীরাই জানেন। সেই পরিস্থিতি কোনো রকমে কাটিয়ে ওঠার লড়াইয়ের কথাও তাঁদের ভুলে যাওয়ার নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, কষ্টসাধ্য হলেও সেই ধাক্কা শুষে নিয়েছে অর্থনীতি এবং সমাজ।

আরও পড়ুন: বছরের প্রথম দিনে শেয়ার বাজারে লাভের মুখ! সম্পদ বাড়ল ১.৪১ লক্ষ কোটি

বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখেন ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিকরা। সমস্ত তথ্য যাচাই করে তবে বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.