প্রায় সব শহরের নিজস্ব একটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন জয়পুর পিঙ্ক সিটি, কলকাতা মিছিলনগরী, কেরল মশলাপাতি, তেমনই মুম্বই পার্ক সিটি। প্রত্যেক সেক্টরে একটা করে পার্ক গুঁজে দিয়েছে, ইয়ে মানে এটা প্রতিবেদকের চোখে বিশেষত্ব বলে মনে হয়েছে, হয়তো অন্য চোখে হেথা নয়, অন্য কোথা। টেরেসে দাঁড়ালে দেখি বাচ্চাদের হুটোপাটি, অফিস ফেরতা লেডিজ অ্যান্ড জেন্টলম্যানদের পাক মারা সঙ্গে বয়স্কদের পিএনপিসি! এখানে সন্ধ্যে হয় দেরিতে, তাই বেরিয়ে পড়া। অনেকেই হাঁটেন, তবে চোখে পড়ার মতো এক মহিলা আমাকে আকর্ষণ করেছেন। একদিনও তাঁকে কামাই করতে দেখিনি এবং আসা-যাওয়া একেবারে ইন-টাইম। ফুল স্পিডে পঞ্চাশবার পার্ক প্রদক্ষিণ করে স্কুটারে চেপে বাড়িমুখো।
সাহসে ভর করে নিজের পরিচয় দিয়ে ওঁকে বলি, আপনার প্রতিটা মুভমেন্ট প্রমাণ দেয়, আপনি উচ্চ-মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির একজন এবং যথেষ্ট ভালো পজিশনে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন। ভদ্রমহিলা প্রথমে হতচকিত হলেও পরে বেশ গদগদ। বুঝলাম ওষুধে কাজ হয়েছে, প্রশংসা এমন জিনিস এক সেকেন্ডে কাত।
আমার প্রশ্ন জলবৎ তরলম, যা কামাচ্ছেন, সংসারে দিয়ে-থুয়ে কোথায় কী ভাবে জমাচ্ছেন?
যেন তৈরি ছিলেন, ওগরালেন- “স্যালারি এগজ্যাক্ট বলছি না, তবে ধরে নিন লাখের এপাশ-ওপাশ। ফ্ল্যাট মেম্বার পাঁচ, সরি ছয় বলতে পারেন, দিন-রাতের বাঈ আছেন। এ বার খরচের ব্যাপারে আমার শেয়ার হল ২৫-৩০-এর মধ্যে। যার মধ্যে ইলেক্ট্রিসিটি, মেইনটেন্স, রাত-দিনের মাসি, কাজের মহিলার মাইনে এবং হাউসহোল্ড কমোডিটি আর মাই পার্সোনাল এক্সপেন্স। আমি ২৫ হাজার কন্ট্রিবিউট করে খালাস, বাদবাকি হাজব্যান্ড। উইকলি এন্টারটেনমেন্টে কখনও ওয়ালেট খুলিনি, দিলেও ধার হিসাবে।
সেভিংস সম্পর্কে আমি খুব সেফ খেলি। এখানেও ফিফটি-ফিফটি। মানে আমি যা করি প্রকাশ (স্বামী) তা করে না। আমার কাছে পিপিএফ, এলআইসি, পেনশন স্কিম (যেহেতু পেনশেন নেই), একই সঙ্গে সেভিংসে একটা গুড অ্যামাউন্ট রাখা, যা এমারজেন্সি পারপাস। প্রকাশের পছন্দ সর্ট আর লংটার্ম ইনভেস্টমেন্ট দু’টোতেই। সর্ট হল ইক্যুইটি, মিউচুয়াল ফান্ড আর লংটার্মে এসআইপি অথবা অ্যানুয়িটি। আমাদের মেয়ের ভবিষ্যতের ব্যাপারে এ টু জেড চাইল্ড প্ল্যানিং ওর। লিকুইড ক্যাশ রাখা প্রকাশের ধাতে নেই। কথার কথা, ১০ টাকা হাতে থাকলে পাঁচ টাকা খাটাবে”। …
থামলেন অনুরাধা মানে, ছোট্ট কথা “গুডনাইট”। পরক্ষণে অদৃশ্য!
“ইনি মিস্টার আনন্দ শর্মা। বেসরকারি একটি সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রশ্ন শুনে সটান বলেন, আমি একমাত্র আর্নিং মেম্বার। ফ্যামিলিতে সাত জন মেম্বার, বুঝলেন আমাকে ট্র্যাপিজের খেলা খেলতে হয়। নো ফ্ল্যাট, ফলে ভাড়া গুনতে হয়। স্ত্রী সুগৃহিনী হওয়ায় এ যাত্রায় টিকেছি। একটা থোক টাকা বরাদ্দ রয়েছে, স্ত্রীর হাতে তুলে দিই, ও সামলে নেয়। পরে ভুলেও চায় না, উল্টে সেখান থেকেই বাঁচায়। অ্যামাউন্ট ধরুন হাজার পঞ্চাশ, ব্যস ওতেই সব। ছেলে-মেয়ের স্কুল-কলেজের ফি পর্যন্ত। এর বাইরে ইলেক্ট্রিক বিল আর নিজের খরচ আমার।
চাকরিতে ঢুকেই জমানো শুরু করি। শ্বশুরবাড়ির দৌলতে এমআইএস জয়েন্টলি রয়েছে, পারতপক্ষে হাত দিই না। পিপিএফ চালাচ্ছি, রিনিউ করছি, ওই একটাতে এখনও মন্দের ভালো ইন্টারেস্ট দিচ্ছে, ওটাই শেষ বয়সের সম্বল। বুঝলেন আঙ্কেল, ধার নিতে ভয় করে, শুধবো কী করে! নইলে নিজস্ব একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিলে এত চুলচেরা হিসেব করতে হতো না”।
নিজেকে দেখলাম। ভাবলাম, উনিশ-বিশ তফাতে জীবন অক্টোপাস!