অনেকটাই নামল আর্থিক বৃদ্ধির হার, কারণ কি আরবিআইয়ের সুদ-নীতি?

RBI

নয়াদিল্লি: মূল্যবৃদ্ধিকে (Inflation) নিয়ন্ত্রণে রাখতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) (RBI) লাগাতার সুদ বাড়িয়েছে। এর ফলে যে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি (Economic Growth) কমতে পারে, সে বিষয়ে সাবধান করেছিলেন একাধিক অর্থনীতিবিদ। সেই আশঙ্কাই এ বার সত্যি হল। চড়া মূল্যবৃদ্ধি এবং বাড়তি সুদের ধাক্কায় কারখানার উৎপাদন কমল। তার ফলে জুলাই-সেপ্টেম্বরে দেশে আর্থিক বৃদ্ধির হার নামল ৬.৩ শতাংশে। গত বছর ওই সময় তা ছিল ৮.৪ শতাংশ। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে ছুঁয়েছিল ১৩.৫ শতাংশ।

কেন কমল আর্থিক বৃদ্ধি

অর্থনীতিবিদদের একটা বড় অংশের দাবি, করোনায় গত বছর এপ্রিল-জুনে জিডিপি-র (GDP) বহর অনেকটাই কম ছিল। তার নিরিখে চলতি বছরের ওই তিন মাসে জিডিপি বৃদ্ধির হার বেশি চড়া দেখিয়েছে। সেই নিচু ভিতের সুবিধা জুলাই-সেপ্টেম্বরে তেমন মেলেনি। দুই ত্রৈমাসিক মিলিয়ে অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাসে বৃদ্ধি ৯.৭ শতাংশ। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, মূল্যবৃদ্ধি ও সুদের ধাক্কায় শেষ ছ’মাসে তা আরও কমতে পারে।

আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা স্পষ্ট আজই কেন্দ্র প্রকাশিত পরিকাঠামো বৃদ্ধির পরিসংখ্যানে। যা বলছে গত মাসে আটটি মূল পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ০.১ শতাংশ যা ২০ মাসে সর্বনিম্ন। সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল ৭.৮ শতাংশ। অশো‌ধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, শোধনাগারের পণ্য, সিমেন্টের উৎপাদন কমেছে।

কী বলছেন অর্থনীতিবিদরা

উপদেষ্টা ইক্রার (ICRA) মুখ্য অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ারের বক্তব্য, ‘‘আর্থিক বৃদ্ধি মূলত কেনাকাটায় খরচের ফলে চাঙ্গা হয়েছে। কিন্তু সুদের পিছনে খরচ ছাড়া রাজস্ব খাতে ব্যয় কমেছে।’’ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন (Nirmala Sitaraman) জানিয়েছেন, গত দু’বারের মতো আগামী বাজেটেও পরিকাঠামোয় খরচ বাড়াবেন। তাঁর দাবি, বেসরকারি লগ্নি আসার ইঙ্গিত মিলেছে। তবে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের (P Chidambaram) অভিযোগ, ‘‘লগ্নির পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। নতুন বিনিয়োগের খিদে কম। আর্থিক বৃদ্ধির জন্য হয়তো এখন আরও বেশি লগ্নি করতে হচ্ছে।’’

আরবিআই (RBI) বলেছে, অক্টোবর-ডিসেম্বর ও জানুয়ারি-মার্চে বৃদ্ধি দাঁড়াবে ৪.৬ শতাংশ। তবে প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ বলেন, ‘‘এই সময়ে তা ৪.৫ শতাংশেরও কম হবে। তিন বছরে বার্ষিক বৃদ্ধি মাত্র ১.৮২ শতাংশ। ভারতের অর্থনীতি নতুন করে কম বৃদ্ধির ফাঁদে পড়ছে। বেশি দেরি হওয়ার আগে সমস্যা চিহ্নিত করে সংস্কার করা জরুরি।’’

কেন্দ্রের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরণের যদিও দাবি, এই অর্থবর্ষে ৬.৮-৭ শতাংশ বৃদ্ধি ছোঁবে দেশ। কিন্তু চিদম্বরমের মতে, ‘‘অক্টোবর-ডিসেম্বরে জিডিপি অনেকটাই কমবে। দেশের বাইরের ও ভিতরের পরিস্থিতি তাকে টেনে নামাচ্ছে। হতাশার বিষয় কেন্দ্র বাইরের অবস্থা নিয়ে অসহায়। ভিতরের সমস্যা অস্বীকার করছে।’’

আরও পড়ুন: আর্থিক বৃদ্ধি কমছেই, কিন্তু তা কতটা? নজর এখন সে দিকেই


Discover more from banglabiz

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখেন ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিকরা। সমস্ত তথ্য যাচাই করে তবে বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from banglabiz

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading