বাংলাbiz ডেস্ক: ২০২১ নাগাদ বিশ্বের অন্তত ১৫ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যে পড়বে। এর মূলে রয়েছে করোনাভাইরাস অতিমারি। এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক।
এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে দেশগুলিকে উন্নয়নের পথে যেতে হলে এবং দারিদ্র্য কমাতে হলে কোভিড-পরবর্তী সময়ের জন্য ‘বিকল্প অর্থনীতি’ প্রস্তুত করতে হবে বলে বিশ্ব ব্যাঙ্ক মনে করে।
এই বিকল্প অর্থনীতি হল নতুন ধরনের ব্যাবসায় এবং নতুন নতুন ক্ষেত্রে মূলধন, শ্রম, দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানো। এ কথা বলেছেন, বিশ্ব ব্যাঙ্কের গ্রুপ প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের হিসাব, এ বছর কোভিড ১৯ (Covid 19) অতিমারির জন্য অতিরিক্ত ৮.৮ কোটি থেকে সাড়ে ১১ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মুখে পড়বে। ফলে ২০২১ সাল নাগাদ বিশ্বে চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে অন্তত ১৫ কোটি।
ডেভিড মালপাস বলেন, অতিমারি এবং বিশ্বব্যাপী মন্দার দরুন পৃথিবীর জনসংখ্যার ১.৪ শতাংশের বেশি মানুষ চরম দারিদ্র্যের শিকার হবেন। যদি কোভিড অতিমারি বিশ্বে না ছেয়ে যেত, তা হলে ২০২০ সালে বিশ্বে দারিদ্র্যের হার ৭.৯ শতাংশে নেমে যেত বলে আশা ছিল।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট
বিশ্ব ব্যাঙ্কের দ্বিবার্ষিক ‘পভার্টি অ্যান্ড শেয়ার্ড প্রসপারিটি রিপোর্ট’-এ বলা হয়েছে, এর ফলে পশ্চাদগমনের হার গিয়ে দাঁড়াবে ৯.২ শতাংশ।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, যে সব দেশে ইতিমধ্যেই দারিদ্র্যের হার খুব বেশি, সেই সব দেশে নতুন করে দরিদ্রের সংখ্যা তো বাড়বেই, আর মধ্য-আয়ের কিছু দেশেও বহু মানুষ চরম দারিদ্র্যের সীমায় চলে যাবে। নতুন করে যাঁরা চরম দরিদ্রের তালিকায় ঢুকবেন তাঁদের ৮২ শতাংশই আসবেন মধ্য-আয়ের দেশ থেকে।
বিশ্ব ব্যাঙ্ক মনে করে, ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের অবসান ঘটানোর যে লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল, সেই লক্ষ্য হাতের বাইরে থেকে যাবে কোভিড অতিমারি পরিস্থিতি, বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিরোধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। একে ঠেকাতে হলে অতি দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর কর্মনীতি নেওয়া দরকার।
বিশ্ব ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যের হার ৭ শতাংশে গিয়ে ঠেকতে পারে।
ভারতের কোনো তথ্য নেই
বিশ্ব ব্যাঙ্ক তার রিপোর্টে জানিয়েছে, ভারত থেকে সাম্প্রতিক তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যের প্রকৃত ছবিটা তুলে ধরা খুবই অসুবিধাজনক হয়ে পড়েছে।
ব্যাঙ্ক বলেছে, দরিদ্র মানুষের একটা বিশাল সংখ্যক মানুষের বাস ভারতে। সেই দেশ থেকে কোনো তথ্য না আসায় বিশ্ব দারিদ্র্যের চলতি হিসাব নিয়ে যথেষ্ট অনিশ্চয়তা রয়েছে।
ধারাভির সাফল্য
মুম্বইয়ের সব চেয়ে বড়ো বসতি ধারাভি। সেখানে পুর আধিকারিকরা যে ভাবে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ সক্ষম হয়েছেন। এই বিষয়টি উল্লেখ করে বিশ্ব ব্যাঙ্ক বলেছে, পুর আধিকারিকরা এই কাজে পাশে পেয়েছেন সম্প্রদায়ের সদস্যদের এবং ও বেসরকারি মেডিক্যাল ক্লিনিকের কর্মীদের। তাঁদের দক্ষতা ও প্রবল ইচ্ছাকে কাজে লাগিয়ে ধারাভিবাসীর ব্যাপক ভাবে পরীক্ষা করা হয়। তাঁদের জ্বর ও অক্সিজেনের মাত্রা নিয়মিত মাপা হয়। এ ভাবেই ধারাভিতে সাফল্য আসে।
ধারাভিতে করোনা সংক্রমণের চূড়ান্ত রূপ দেখা গিয়েছিল মে মাসে। তিন মাস পর জুলাইয়ে তা ২০ শতাংশ কমে যায়।
করোনা সংক্রমণ রোখার যে সব প্রথাগত পদ্ধতি আছে, তার সঙ্গে সাধারণ মানুষের সক্রিয়তা এবং অধ্যাবসায় মিলিয়ে ধারাভিতে এই সাফল্য এসেছে বলে বিশ্ব ব্যাঙ্ক জানিয়েছে।
বিশ্বের কোভিড-চিত্র
জন হপকিন্স করোনাভাইরাস রিসোর্স সেন্টারের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ৩৫ কোটিরও বেশি মানুষ এবং মারা গিয়েছেন ১০ লক্ষেরও বেশি।
সব চেয়ে বেশি আক্রান্তদের দেশ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫ লক্ষেরও বেশি এবং মারা গিয়েছেন ২ লক্ষ ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
বাংলাbiz-এ আরও পড়তে পারেন
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আর্থিক নীতি কমিটিতে এলেন তিন বহিরাগত সদস্য