এত স্মার্টফোন। এত ইন্টারনেটের ব্যবহার। সবাই তো আর মোবাইলে এফএম শোনেন না! মুম্বই থেকে লিখছেন অরুণাভ গুপ্ত
সব রাজ্যেই রাজ্যের ব্যস্ততা, কিন্তু মুম্বই সব কটাকেই ছাপিয়ে গিয়েছে। বাণিজ্যনগরী উপাধি এমনি জোটেনি। পারিবারিক কারণে মুম্বই এখন আমার সেকেন্ড হোম। প্রচুর সময় মিলছে শহরটাকে রিড করার। এই যেমন ঠিক এই মুহূর্তে জলে ভাসা মুম্বই দেখছি। খটখটে অবস্থায় যা, সপসপেতেও তাই।
উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে হাঁটলে আজগুবি কিছু কৌতুহল মাথায় চাগাড় দেয়। ভেবে নেওয়া যেতে পারে, স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সম্পর্কে আলবত প্রেমিক-প্রেমিকা। তার গোঁজা দু-কানের ফুটোয় কত ভাষার সংলাপ। দেদার নেটের মনখোলা ব্যবহার। উন্নয়নে এটা দস্তুর তবে… সমাজের একটা স্তরে এটা থাকা বাঞ্ছনীয় কিন্তু লটের দরে কোনো মানে হয় না, অসভ্যের মতো হলেও প্রশ্নটা এসেই যায়। এই বিশাল গোষ্ঠীর হাতযশে হিসেব-নিকেশ ধরাছোঁয়ার বাইরে। নেটওয়ার্ক বিজি, ভাঁড়ারে টান ধরবে না? রেশনিং এল বলে!
একটা সমীক্ষা বলছে, ২০১৬ সালে ভারতে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৪৫ কোটি। সেই সমীক্ষার অনুমানই বলছে, ২০২২ সালে এই সংখ্যাটা পৌঁছাবে ৮৫.৯ কোটিতে। এত মানুষের হাতে স্মার্টফোন! কী করে- এফএম-এ গান নিশ্চয় শোনা না সবাই? আসলে কি সবই নেটের মহিমা!
উইদাউট ভাবাভাবি স্যাটস্যাট উত্তর দিয়েছে সাগর। তবে তার নাম সাগর হলেও বলতে হবে স্যাগার, এটাই এখানে চল। পেশায় ধোপা, গাঁট্টাগোঁট্টা চেহারার জোয়ান লেড়কা। তার সাইকেলের সারা দেহে ঝোলানো গাট্টি তো আছেই প্লাস নিজের সর্বাঙ্গ। সেই স্যাগার মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে বলল, “হোয়াটসঅ্যাপ করার জন্য। যাঁরা জামাকাপড় দেন তাঁদের সঙ্গে অনবরত যোগাযোগ না রাখলে তাঁরা গোঁসা করবেন। ওঁদের লিখলাম, কবে ওঁরা ডেট দিলেন, ব্যস খেল খতম। বুঝলেন আঙ্কেল, এখন আর কেউ হ্যালো হ্যালো করে না। দু-জনেই আধা শুনবো, ভুল হবে, মুশকিল হবে। ফোনাফুনি আপনা আদমিদের লিয়ে”।
মোহন (বলতে হবে মোহান), বছর সাইত্রিশ-আটত্রিশের পেটানো শরীর। এখানে এই বয়সিদের মধ্যে রোগা-প্যাটকা দুবলা খুবই কম। মনে হয় গায়ে-গতরে খাটাখাটনি বেশির জন্যে। ও সেলুনে কাজ করে। কাজ, চুল-দাড়ি কাটা, ম্যাসাজ করা। ওর কদর রয়েছে, বিশেষ করে ম্যাসাজে। বেশির ভাগ ঢুলতে থাকে। মোহন বলল, গান আর সিনেমা ওর ভীষণ প্রিয়। কাজের ফাঁকে খানিকটা করে সিনেমা দেখা ওর নেশা। গর্বের সঙ্গে হেসে বলে, শুনে শুনে গান করতে ওস্তাদ মোহন। আর দেখে দেখে অভিনয় নকল করতেও পটু। নমুনা দেখে মনে হয়, মিথ্যে বলেনি সে। এতে না কি ওর কাজের স্পিরিট বাড়ে, মন ঝরঝরে থাকে।
রাজারাম না থাকলে চোখে অন্ধকার দেখে খদ্দেররা। রাজারামের মস্ত বড়ো গুণ, দোকানে ওষুধ না থাকলে ঝটাপট আনিয়ে দেয় সে। দোকানের মালিক না হলেও খাটে কিন্তু মালিকের মতোই। মোবাইল ইন্টারনেটে সে কী করে?
এমন প্রশ্নের উত্তরে সে বলে, “এই যে আপনার মেডিসিন ঝটসে আনালাম, ফিন অর্ডার দিলাম, সবই মোবাইলে। সাপ্লায়ারদের সাথে যোগাযোগ রাখা, বাজারে কী নয়া মেডিসিন এল- সব খবরই মোবাইলে মিলে যায়। নেট না থাকলে আমি-আপনি সব ভি কানা”।
বিশ্ব ভাসছে মার্কেটিংয়ের উপর। এতে কোনো শ্রেণিভেদ নেই। বিজনেস-বিজিনেস। যে যেখানে আছে, নিজের মতো সাজিয়ে নিয়ে চলছে-লড়ছে এবং বাঁচছে-বাঁচাচ্ছে। সো বাঙালিবাবু, কেয়া সামঝা, কণ্ঠ ছাড়ো জোরে, তোমায়-আমায় দেখা হবে নেটের মাধ্যমে!