ধার করে ঘি খাওয়া। প্রাচীন এই প্রবাদের প্রতিফলন এখন জীবনের সমস্ত পদক্ষেপেই। ঘরবাড়ি, গাড়ি কেনা থেকে শুরু করে পড়াশোনার জন্যও এখন ধার বা ঋণ নিতে হয় অনেককেই। পকেটে যাই থাক না কেন, উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য ঋণ নেওয়ার বিষয়টি হয়ে উঠেছে জলভাত। বিভিন্ন ধরনের ঋণ পাওয়া যায় ভারতীয় ব্যাঙ্ক এবং ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে।
সহজ ও সস্তা কিস্তিতে গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে থাকে ব্যাঙ্কগুলি। দেশে ‘নো কস্ট ইএমআই’-এর প্রবণতাও দ্রুত বেড়েছে। দীর্ঘমেয়াদি থেকে দৈনন্দিন যে কোনো আর্থিক চাহিদার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ঋণের সুবিধা পাওয়া যায়। এত ঋণের মেলায় বিভ্রান্তি দেখা দিলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। চলুন জেনে নেওয়া যাক ব্যাঙ্কের দেওয়া প্রধান ঋণগুলির বিবরণ।
গৃহঋণ বা হোম লোন
গৃহঋণ হল একটি সুরক্ষিত ঋণ। যেখানে আপনি যে ঘরবাড়ি কিনছেন, সেটা বন্ধক রেখে ঋণ দেওয়া হয়। যে সম্পত্তি কিনছেন, সেটা দামের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ হিসেবে পাবেন। এখানে আপনাকে নির্দিষ্ট মেয়াদে মাসিক কিস্তির মাধ্যমে মূল টাকা ও সুদ মেটাতে হবে। বিভিন্ন ব্যাঙ্কে এই ঋণের উপর সুদের হার বিভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, ৭ শতাংশ থেকে শুরু হয় গৃহঋণের সুদের হার।
গাড়ি ঋণ বা কার লোন
গাড়ি কেনার জন্য নেওয়া ঋণ এটি। ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক, উভয় যানবাহনের জন্যই এই ঋণ পাওয়া যায়। দুই চাকা, চার চাকা এবং ভারী যানবাহন অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এই ঋণের সুদের হার বার্ষিক ৭ শতাংশ থেকে শুরু হতে পারে। গাড়ির ধরনের উপর নির্ভর করে সুদের হার। কিছু গাড়ি ঋণের জন্য, ব্যাঙ্ক গাড়ির মূল্যের ১০০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে।
স্বর্ণঋণ বা গোল্ড লোন
এটি একটি সিকিওরড লোন, যেখানে সোনার গহয়না জামানত হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আপনি নিজের ঋণপ্রদানকারীর কাছে সোনার গহনা বন্ধক রাখবেন এবং বিনিময়ে ঋণ পাবেন। ঋণের পরিমাণ সাধারণত সোনার মূল্যের একটি শতকরা ভাগ হয়ে থাকে। আপনি মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন।
সম্পত্তি ঋণ
এটি এক ধরনের বন্ধকী ঋণ, যার মাধ্যমে ঋণগ্রহীতা ঋণদাতার কাছে তার সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ পেতে পারেন। আবাসিক এবং বাণিজ্যিক উভয় সম্পত্তির বিনিময়ে ঋণ নেওয়া যেতে পারে।
এফডি লোন
ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণগ্রহীতাদের ফিক্সড ডিপোজিটের বিনিময়ে ঋণ প্রদান করে। ঋণগ্রহীতারা এফডি মূল্যের ৬০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন। পরিমাণ। মেয়াদের উপর নির্ভর করে সুদের হার। তবে সাধারণত এটা ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশের মধ্যেই থাকে।
বিমা ঋণ
একটি জীবনবিমা পলিসির বিনিময়ে ঋণ নিতে পারেন বিমাকারী। সুদের হার বিমা কোম্পানির উপর নির্ভর করে, তবে এটি সাধারণত ব্যক্তিগত ঋণের চেয়ে কম হয়।
ব্যক্তিগত ঋণ
ব্যক্তিগত ঋণ বা পার্সোনাল লোন হল এক ধরনের অসুরক্ষিত ঋণ। যা ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি দিয়ে যাকে। আপনার ব্যক্তিগত আয় ও অতীতের ঋণ নেওয়ার তথ্যের উপর ভিত্তি করেই ব্যাঙ্ক এই ঋণ অনুমোদন করে। বিভিন্ন কারণে গ্রাহক পার্সোনাল লোন নিয়ে থাকে। যেমন কোনও ধার মেটাতে, বিয়ের খরচ মেটাতে, চিকিৎসার খরচ দিতে ব্যক্তিগত ঋণ দেওয়া হয়।
শিক্ষা ঋণ বা এডুকেশন লোন
দেশ এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রায় সমস্ত ব্যাঙ্কই পড়ুয়াদের শিক্ষা ঋণ-এর সুবিধা প্রদান করে। ব্যাঙ্কের যোগ্যতার মাপকাঠির সঙ্গে শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয়তা মিলে গেলে খুব সহজেই এই ঋণ পাওয়া যায়। টিউশন ফি, পরীক্ষা ফি, হোস্টেল ফি থেকে শুরু করে যাতায়াতের খরচ (বিদেশে পড়াশুনার ক্ষেত্রে)-সহ কোর্স বা ডিগ্রি সম্পূর্ণ করতে যা যা খরচ দরকার, তার সমস্তটাই ব্যাঙ্ক বহন করবে।
স্বল্পমেয়াদী ব্যবসা ঋণ
ব্যবসায় অনিশ্চয়তা যে কোনো সময় আসতে পারে। যদি একটি ব্যবসা আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়, তবে এই স্বল্পমেয়াদী ব্যবসায়িক ঋণ নেওয়া যেতে পারে। স্বল্পমেয়াদী ব্যবসায়িক ঋণের সুদের হার প্রতি মাসে ১ শতাংশ থেকে ১.৫ শতাংশের মধ্যে হতে পারে।
কার্যকরী মূলধন ঋণ বা ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোন
ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি ব্যবসায়ীদের কার্যকরী মূলধনের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করার জন্য কার্যকরী মূলধন ঋণ দেয়। এই ঋণটি ক্যাশ ক্রেডিট হিসাবেও পরিচিত, এখানে ঋণের পরিমাণ যা পাওয়া যেতে পারে তা ঋণদাতা, পাওনাদার এবং ব্যবসার জন্য কার্যকরী মূলধন গঠনকারী স্টকের উপর নির্ভর করে।
আরও পড়ুন: জানেন কি, বাড়ি ভাড়ার চুক্তি কেন ১১ মাসের জন্যই হয়?
Discover more from banglabiz
Subscribe to get the latest posts sent to your email.