চাহিদা বাড়ছে হোমিওপ্যাথির! চাই সদর্থক পদক্ষেপ, মত ওষুধ প্রস্তুতকারক থেকে চিকিৎসকদের

homeo 2

কলকাতা: বাংলায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার উপর সাধারণ মানুষের নির্ভরশীলতা ক্রমশ বাড়ছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বব্যাপী এই চিকিৎসা পদ্ধতি আরও বেশি করে সর্বজনীন হয়ে উঠছে। এই ধারা ধরে রাখতে হলে বেশ কিছু সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সরকারের। বুধবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত একটি সাংবাদিক সম্মেলন এমনটাই মত তুলে ধরলেন হোমিওপ্যাথি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার কর্ণধার থেকে বিশিষ্ট চিকিৎসকেরা।

করোনা মহামারির সময় নির্দিষ্ট কিছু হোমিওপ্যাথি ওষুধের চাহিদা উঠেছিল তুঙ্গে। তার পর করোনা ভ্যাকসিন বাজারে আসার পর অথবা সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর সেই সব ওষুধের চাহিদা স্বাভাবিক ভাবেই কমেছে। তবে হোমিওপ্যাথির উপর সাধারণ মানুষের আস্থায় একটা ইতিবাচক প্রভাব অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেন পশ্চিমবঙ্গের পরিচিত হোমিওপ্যাথি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা শেঠ দে অ্যান্ড হোমিও কোম্পানির কর্ণধার সৌম্যশঙ্কর দে। তাঁর কথায়, “করোনার কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। তবে আমাদের হোমিওপ্যাথি ওষুধে এই রোগ প্রতিরোধ এবং নিরাময় সম্ভব হয়েছে। চিকিৎকরা নির্দিষ্ট সিস্টেমে যে ভাবে ওষুধ দিয়েছেন, তাতে খুব ভালো ভাবেই করোনার চিকিৎসা সম্ভব হয়েছে। ফলে তার পরে আমাদের একটা সেটআপ তৈরি হয়ে গিয়েছে। ফলে চাহিদা এখনও রয়েছে”।

চাই সদর্থক পদক্ষেপ

gp
[ডা. জিপি সরকার]

অ্যালেন ল্যাবরেটরিজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা. জিপি সরকার বলেন, “অ্য়ালোপ্যাথিতে যেমন এমবিবিএস, তেমনই হোমিওপ্যাথিতে বিএইচএমএস। দু’টোই এখন সমমর্যাদা এবং স্বীকৃতি পেয়েছে। ডাক্তারি পড়ুয়ারাও এখন হোমিওপ্যাথিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সারা দেশে ২৫২টি হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। কিন্তু পূর্বভারতে তুলনামূলক ভাবে তা অনেক কম। দু:খের বিষয় পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ১৩টি হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। মনে রাখতে হবে, অ্যালোপ্যাথি রোগের চিকিৎসা করে, কিন্তু হোমিওপ্যাথি রোগীর চিকিৎসা করে। ঠিক ওষুধ প্রয়োগে রোগের নিরাময় অব্যর্থ। চিকিৎসায় গ্যারান্টি দিতে পারে একমাত্র হোমিওপ্যাথি। ফলে এই বিষয়গুলি নিয়ে ভাবতে হবে”।

বিএইচসিডিএ-র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সচ্চিদানন্দ চৌধুরীর বলেন, “২০০৯ সালে এই সংগঠন তৈরি হয়েছিল। রাজ্যের প্রত্যেক জেলায় শাখা সংগঠনের মাধ্যমে হোমিওপ্যাথি ওষুধ ব্যবসা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সরকারি নিয়ম-নীতি মানার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। আগামী ২২ জানুয়ারি বরানগর রবীন্দ্রভবনে সংগঠন যে আনন্দ উৎসবের আয়োজন করেছে, সেখানে দেশের ১৪টি রাজ্যের হোমিওপ্যাথি ওষুধ বিক্রেতা সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। পারস্পরিক মতবিনিময়ের মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিকে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছি আমরা। সরকারের কাছেও বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ এবং ওষুধ বিক্রেতাদের সমর্থন করে, এমন সরকারি নীতির পক্ষেই আমরা”।

উত্তরপাড়ার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক অলোক ভদ্র জানান, “হোমিওপ্যাথি ওষুধ বিক্রেতাদেরও ড্রাগ লাইসেন্সের প্রয়োজন। পাঁচ বছরে সেই লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের জন্য খরচ পড়ে আড়াইশো টাকা। শোনা যাচ্ছে, সেই চার্জ কয়েকগুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এতে ওষুধ বিক্রেতাদের ঘাড়ে চাপতে পারে বাড়তি বোঝা। ফলে এ ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা উচিত নয়”।

এগোতে হবে হোমিওপ্যাথিকে

soumya
[সৌম্যশঙ্কর দে]

হোমিওপ্যাথি গবেষণা এবং চিকিৎসায় বিশেষ অবদানের জন্য ‘হোমিওজ্যোতি’ এবং ‘হোমিওরত্ন’ শীর্ষক দু’টি পুরস্কার প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেঙ্গল হোমিওপ্যাথিক কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন বা বিএইচসিডিএ-র উত্তর কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনা শাখা। কলকাতা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়, আগামী ২২ জানুয়ারি বরানগর রবীন্দ্রভবনে ‘আনন্দ উৎসব ২০২৩’ অনুষ্ঠানে ওই সম্মানগুলি তুলে দেওয়া হবে প্রাপকদের হাতে।

ওই অনুষ্ঠানের টাইটেল স্পনসর শেঠ দে অ্যান্ড হোমিও কোম্পানি। সংস্থার কর্ণধার সৌম্যশঙ্কর দে বলেন, “আমরা হোমিওপ্যাথিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছি। আমরা সবাই এই সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত। আগামী ২২ জানুয়ারির ‘আনন্দ উৎসব ২০২৩’ আদতে হোমিওপ্যাথির স্বার্থেই”।

আনন্দ উৎসব-এর টাইটেল স্পনসর হওয়ার প্রসঙ্গে সৌম্যশঙ্করবাবু বলেন, “এ ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ আসতেই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। সংগঠকরা অনুষ্ঠানটিকে যে ভাবে সাজাতে চলেছেন, তা যথেষ্ট চিত্তাকর্ষক। এর পরই প্রস্তাব আসে আনন্দ উৎসব-এর টাইটেল স্পনসর হওয়ার। আমি বিস্ময় প্রকাশ করে বলি, এত বড়ো বড়ো মাল্টিন্যাশলাল কোম্পানি রয়েছে, বাজারে তাদের প্রসার বিশাল, তা হলে আমাদের প্রস্তাব দিচ্ছেন কেন। সংগঠকরা জানান, তাঁরা শুধুমাত্র বাংলারই কোনো সংস্থাকে টাইটেল স্পনসর হিসেবে চাইছেন। এই সিদ্ধান্তটা আমার খুব ভালো লাগল, এবং আমি এক কথায় তাঁদের এই প্রস্তাবেও রাজি হয়ে গেলাম”।

আরও পড়ুন: আরও নীচে নামবে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি? আশঙ্কা কেন্দ্রের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার কথায়

বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখেন ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিকরা। সমস্ত তথ্য যাচাই করে তবে বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.