কাতারের ৩০ হাজার কোটি ডলারের বিশ্বকাপ শেষের প্রহর গুনছে, ফাঁকা হোটেল, স্টেডিয়ামের ভবিষ্যৎ কী

২০২২-এর ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ হিসেবে ২০১০ সালে মনোনীত হয়েছিল কাতার। তার পর থেকে প্রায় ১২ বছর ধরে ৩০ হাজার কোটি ডলার এবং অগুন্তি বিতর্ককে সঙ্গী করেই প্রস্তুতি এবং এখন সমাপ্তির অপেক্ষা।

রবিবার ফুটবল বিশ্বযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বে মুখোমুখি হবে আর্জেন্তিনা এবং ফ্রান্স। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামের সেই ফাইনাল ম্যাচে চোখ রাখবে বলে প্রত্যাশা আয়োজকদের। কিন্তু তার পর?

খালি হয়ে যাবে কাতার

আয়োজকরা, বিশেষ করে ফিফা – ইভেন্টটিকে একটি সম্পূর্ণ সাফল্য হিসাবে দেখছে। টেলিভিশনে রেকর্ড সংখ্যাক দর্শক, ফুটবলপ্রেমীদের উচ্ছ্বাস আর বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির আগ্রহ এই টুর্নামেন্টকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু বিশ্বকাপকে সামনে রেখে কাতার যে ভাবে এগিয়েছে, সেই জায়গা ধরে রাখা ততটা সহজ হবে না বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

টুর্নামেন্ট শেষ হলে ঘরে ফিরে যাবেন ৭ লক্ষের বেশি ফুটবল ভক্ত। খালি হয়ে যাবে কাতার। আগত অতিথিরা এখনই নিজেদের গন্তব্যে ফিরতে শুরু করেছেন। একই সঙ্গে নিজের দেশে ফিরে যাবেন বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিকও। সবমিলিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়। কিছু কাজ অস্পূর্ণ রয়ে যাবে। খালি হয়ে পড়ে থাকবে হোটেলের প্রচুর রুম। অন্য দিকে, কয়েকটি স্টেডিয়াম যে আবার কবে ব্যবহার হবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।

প্রভাব আন্তর্জাতিক সম্পর্কে

বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত বিতর্কের প্রভাব পড়তে পারে কাতারের আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও। শীতকালে ইউরোপের আমদানি করা এক-চতুর্থাংশ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করে কাতার। এখন বিশ্বকাপের আয়োজনকে কেন্দ্র করে পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকার এবং এলজিবিটিকিউ সংক্রান্ত বিতর্কে সমালোচনার মুখে পড়েছে কাতার। সে সব বিতর্ক ঝেড়ে ফেলতে সময় লাগারই কথা।

বিশ্বকাপের বাইরেও চলতি সপ্তাহে, সংবাদ শিরোনামের বিষয় হয়ে উঠেছে – ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে ঘুষের অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি,বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম অঞ্চলগুলির একটি দেশে কী ভাবে একটি বৃহত্তম ক্রীড়া ইভেন্ট আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দায়ের করা একটি অভিযোগে বলা হয়েছিল, কাতারের হাতে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সমর্থন করার জন্য অর্থ বিনিময় হয়েছে। এর জন্য বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যদিও কাতারের দাবি, তারা টুর্নামেন্ট পাওয়ার জন্য কাউকে কোনো অর্থ দেয়নি।

কাতারের লক্ষ্য

বিশ্বকাপকে সামনে রেখে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছিল কাতারের। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে নিজের ভাবমূর্তির আধুনিকীকরণ করা এবং আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী দুবাইয়ের সমতুল্য একটি পর্যটন ও ব্যবসায়িক গন্তব্যে পরিণত করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। যে কারণে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে শহরগুলির রূপান্তরকে অনুঘটক হিসাবে দেখা হয়েছে।

১৯৯২-এ বার্সেলোনা ওলিম্পিক ভোল বদলে দিয়েছিল স্প্যানিশ সহরের। অনেক প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এবং পর্যটন নিয়ে এসেছিল বৃহত্তম ক্রীড়া ইভেন্ট। কিন্তু সেই উৎসাহ প্রশমিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যয় বেড়ে যাওয়া নিয়ে প্রবল সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

কাতারের ক্ষেত্রেও তার ভিন্ন কিছু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে না। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার আগেই খালি হয়ে যাচ্ছে হোটেল অথবা অ্য়াপার্টমেন্টগুলি। সামগ্রিক ভাবে টান পড়েছে স্থানীয় ব্যবসাতেও। টুর্নামেন্টের প্রথম দুই সপ্তাহে কাতারে পৌঁছেছিলেন প্রায় ৭ লক্ষ ৬৫ হাজার ফুটবল সমর্থক। কিন্তু বিশ্বকাপের রেশ মিলিয়ে গেলে, বিদেশি অতিথির সংখ্যা যে কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা এখনই স্পষ্ট।

আরও পড়ুন: অস্থির শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করবেন কী ভাবে? কাজে আসতে পারে ‘বারবেল পদ্ধতি’

বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখেন ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিকরা। সমস্ত তথ্য যাচাই করে তবে বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.