শুক্রবার সন্ধ্যায় ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার কবলে বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস, শালিমার-চেন্নাই সেন্ট্রাল করমণ্ডল এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি। এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩৩। আহত ৯০০ জনেরও বেশি। প্রত্যক্ষদর্শীদেরও আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। উদ্ধারকাজ যত এগোবে, নিহত এবং আহতের সংখ্যা আরও বাড়বে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনে অনেক যাত্রী আটকে রয়েছেন বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন। স্বাধীনতার পর সবচেয়ে মারাত্মক ট্রেন দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে একটি ওড়িশার এই দুর্ঘটনা।
ঘটনাস্থলে দেখা যায়, সব কিছু লন্ডভন্ড। ট্রেনের একটা কামরার উপরে উঠে গিয়েছে আরেকটা কামরা। কোনোটা উল্টে গিয়েছে। তাদের চাকাগুলো উপরের দিকে। কয়েকটা পাশের নয়ানজুলিতে পড়ে। মালগাড়ির উপরে উঠে পড়েছে আস্ত একটা ইঞ্জিন। যেন উড়ে গিয়ে ঘাড়ের উপর চড়ে বসেছে! রেলের লাইন বলতে কিছুই নেই। সিমেন্টের স্লিপারগুলি ভেঙেচুরে, লোহার রড বেরিয়ে একেবারে কঙ্কালসার। উপড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। ইতস্তত ছড়িয়ে মৃতদেহ। সাদা কাপড়ে ঢাকা। তার মধ্যেই ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। চিৎকার। আর্তনাদ। আর সব কিছু ছাপিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেনের আওয়াজ।
ভারতের কয়েকটি ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা
১. ১৯৮১ সালের ৬ জুন বিহারে বাগমতী নদীর সেতু পার হওয়ার সময় সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ট্রেন দুর্ঘটনা। সাড়ে সাতশোর বেশি যাত্রীর প্রাণ যায়।
২. ২০ আগস্ট, ১৯৯৫, পুরুষোত্তম এক্সপ্রেস ফিরোজাবাদের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা কালিন্দী এক্সপ্রেসকে ধাক্কা মারে। সরকারি ভাবে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৩০৫।
৩. ১৯৯৮ সালের ২৬ নভেম্বর জম্মু তাওয়াই-শিয়ালদহ এক্সপ্রেস পঞ্জাবের খান্নায় ফ্রন্টিয়ার গোল্ডেন টেম্পল মেলের তিনটি লাইনচ্যুত কোচের সঙ্গে সংঘর্ষে ২১২ জন নিহত হয়।
৪. ১৯৯৯ সালের ২ আগস্ট গাইসাল ট্রেন বিপর্যয় ঘটে। ব্রহ্মপুত্র মেল উত্তর সীমান্ত রেলওয়ের কাটিহার ডিভিশনের গাইসাল স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা অবধ অসম এক্সপ্রেসকে ধাক্কা মারে। এতে ২৮৫ জনেরও বেশি লোক মারা যায় এবং ৩০০ জনেরও বেশি আহত হয়। নিহতদের মধ্যে অনেকেই সেনা, বিএসএফ বা সিআরপিএফ কর্মী।
৫. ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর কানপুর থেকে ৬০ কিমি দূরে পুখরায়নে লাইনচ্যুত হয় ইন্দোর-রাজেন্দ্রনগর এক্সপ্রেসের ১৪টি কামরা। নিহতের সংখ্যা ১৫২ এবং ২৬০ জন আহত।
৬. ২০০২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রফিগঞ্জের কাছে ধাবী নদীর উপর লাইনচ্যুত হয়ে যায়। ১৪০ জনের বেশি যাত্রীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় সন্ত্রাসবাদীদের হাত ছিল বলে দাবি করা হয়।
৭. ১৯৬৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর রামেশ্বরম ঘূর্ণিঝড়ে পামবান-ধনুসকোডি প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি বিধ্বস্ত হয়। এতে ১২৬ জনেরও বেশি যাত্রীর মৃত্যু হয়।
৮. ২০১০ সালের ২৮ মে জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনা। ঝাড়গ্রামের কাছে লাইনচ্যুত হয়েছিল মুম্বইগামী ট্রেনটি। তারপরে একটি মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে। যার ফলে ১৪৮ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। এই দুর্ঘটনার নেপথ্যেও জঙ্গিদের হাত ছিল বলে দাবি করা হয়।
Discover more from banglabiz
Subscribe to get the latest posts sent to your email.