দশকের পর দশক অনিয়ন্ত্রিত আর্থিক ব্যবস্থা, যে সব কারণে ভুগছে পাকিস্তান

চরম অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে পাকিস্তান। প্রতিবেশী দেশ যে খুব কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, দীর্ঘকাল ধরে ঘটে চলা অবক্ষয় এই মুহূর্তে চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে পাকিস্তানে!

কী ভাবে দেউলিয়া হওয়ার পথে এগিয়েছে পাকিস্তান

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাওজা আসিফ বলেছেন, নগদ সংকটে থাকা দেশটি দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। এমন আশঙ্কার মধ্যে পাকিস্তান ইতিমধ্যেই ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ঋণদাতাদের কাছ থেকে অর্থ টেনে নিয়ে সেই অর্থ পরিশোধের অঙ্গীকার ভেঙে ফেলায় পাকিস্তানের জুড়ি নেই। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য সংস্থা, আমলাতন্ত্র এবং রাজনীতিবিদদের দুষে চলেছেন দেশের মানুষ।

নিজের শহর শিয়ালকোটে একটি অনুষ্ঠানে ব্কতৃতা করার সময় মন্ত্রী বলেন, “দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য পাকিস্তানকে নিজের পায়ে দাঁড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ”। তবে এ কথা মুখে বলা যতটা সহজ, তার বাস্তবায়ন ততটাই কঠিন। নতুন করে মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইলে তাকে এক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে পাকিস্তানকে।

মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ভারতের দুই-তৃতীয়াংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং রাজস্ব ও মোট জাতীয় উৎপাদনের অনুপাত ভারতের চাইতে ৭০ শতাংশ কম বলেই দেখা যাচ্ছে। এর ফলে সে দেশের সরকারের পক্ষে একান্ত প্রয়োজনীয় উন্নয়নমূলক কাজগুলি করে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না।

 দেশের অর্থনীতিকে পতনের মুখ থেকে বাঁচাতে আইএমএফের কাছে বেলআউট (পুনরুদ্ধার) চেয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু ১০ দিনের আলোচনার পর পাকিস্তান হতাশ হয়ে পড়ে। আইএমএফ বলেছিল, পাকিস্তানের রাজস্ব ঘাটতি এবং রাজস্বের মধ্যে বড়ো পার্থক্য রয়েছে। অন্য দিকে, পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের মতে, পাকিস্তানের অর্থসচিব হামিদ শেখ বলেছেন যে বৈদেশিক মুদ্রাভাণ্ডার শূন্য হওয়ার বিষয়ে আইএমএফের সঙ্গে ইতিমধ্যে একটি চুক্তি করা হয়েছে।

এর পরই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা বিদ্যুতের ভর্তুকি বাতিল করে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির অনুমোদন দেয়। বিদ্যুৎ-সহ বিভিন্ন ভর্তুকি প্রত্যাহার আইএমএফের শর্তের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভার্চুয়াল মাধ্যমে আলোচনার আগে আইএমএফকে সন্তুষ্ট করতে পাকিস্তানের মন্ত্রীসভা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুতে ভর্তুকি বাতিল করার ফলে পাকিস্তানি শিল্পের ওপর চাপ বাড়ছে। তবে শুধু বিদ্যুতের দামেই যে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে তা নয়। পাকিস্তানে বিদ্যুতের পাশাপাশি অন্যান্য জিনিসের দামও আকাশ ছোঁয়া। পাকিস্তানে লিটার প্রতি দুধের দাম ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে।

খালি হওয়ার পথে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রাভাণ্ডার। জানা গিয়েছে, পাকিস্তানের বিদেশি মুদ্রাভাণ্ডার ৩ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে গেছে। পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রা ভান্ডারের দেখভাল করে ওই দেশের প্রধান রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যাঙ্ক অব পাকিস্তান (SBP)। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তানের কাছে গচ্ছিত বিদেশি মুদ্রায় আর কয়েকটা দিনই চলতে পারে পাকিস্তান।

আর্থিক সংকট চরম আকার ধারণের অন্যতম ৫টি কারণ

১. বছরের পর বছর ধরে অনিয়ন্ত্রিত আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা পাকিস্তানের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এরই মধ্যে মড়ার উপর খাড়ার ঘা বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট। পাশাপাশি বিধ্বংসী বন্যার ফলে দেশটির এক তৃতীয়াংশ তলিয়ে গিয়েছে।

২. কাঁচামালের ঘাটতির পাশাপাশি, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান জ্বালানি খরচ এবং রুপির পতন উৎপাদন শিল্পগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

৩. ২০১৯ সালে অর্থনীতির অনিশ্চিততা এবং আমদানির উপর নির্ভরতার কারণে, পাকিস্তানকে ২২টি ঋণ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

৪. আটের দশকের শেষ থেকে ১৩ বার পাকিস্তানের ঋণ মুকুব করেছে আইএমএফ। কিন্তু এ বার আর সহজে বেলআউট সম্ভব নয়। আইএমএফ-এর চাপের মুখে ভরতুকি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান।

৫. ২০১৫ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায়, অর্থনীতিবিদ আকবর নোমান বলেছিলেন, ১৯৬০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে পাকিস্তান বিশ্বের ১০টি দ্রুততম প্রসারিত অর্থনীতির মধ্যে একটি ছিল। তিনি আরও দাবি করেছিলেন যে এই সময়ের মধ্যে “ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত অস্বস্তির বীজ বপন করা হয়েছিল”।

বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখেন ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিকরা। সমস্ত তথ্য যাচাই করে তবে বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.