বিশাল গুপ্ত: সঞ্চয় অথবা বিনিয়োগের বিবিধ রকমের ক্ষেত্রে রয়েছে। তবে নিজের আর্থিক পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই ক্ষেত্রটি বেছে নেওয়াই সব থেকে কঠিন কাজ। এ ব্যাপারে সহায়তা নেওয়া যেতে পারে আর্থিক উপদেষ্টার। কিন্তু সাধারণ মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের পক্ষে সেটা নেওয়া হয়ে ওঠে না।
কোথায় সঞ্চয় বা বিনিয়োগ করলে কতটা লাভ, সেটা যেমন দেখার, তেমনই দেখার কোথায় কতটা ঝুঁকি রয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকি এবং তুলনামূলক ভাবে বেশি আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে এমন ক্ষেত্রটিকেই বেছে নিতে হবে। এ বিষয়েই চলে আসে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ) এবং মিউচুয়াল ফান্ডের তুল্যমূল্য বিচার।
বলে রাখা ভালো, বিনিয়োগের সঙ্গে জড়িত হলেও দু’টি ভিন্ন মাধ্যম। একটিতে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকার নির্দিষ্ট মেয়াদী সঞ্চয় রিটার্নের পরিমাণও নির্দিষ্ট। অন্য দিকে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ বাজারের ওঠানামার সঙ্গে গভীর ভাবে সম্পর্কযুক্ত। সেখানে উচ্চমাত্রার ঝুঁকি কাজ করে থাকে, সে অর্থে পিপিএফে যা নেই বললেই চলে। সরকারি সুদের পরিমাণ সামান্য হেরফের হলেও মেয়াদ শেষে ফেরত পাওয়া টাকার পরিমাণ নিয়ে বড়োসড়ো কোনো আশঙ্কার কারণ থাকে না।
তবে এ বিষয়ে আবার একবার বলা যায়. বিনিয়োগকারীর আর্থিক অবস্থান দেখে তবেই এই ক্ষেত্র নির্বাচন করা প্রয়োজন। অর্থাৎ, নিজের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে কি না, সেটাই খতিয়ে দেখতে হবে। এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর একজন আর্থিক উপদেষ্টা সব চেয়ে ভাল দিতে পারবেন।
মিউচুয়াল ফান্ডগুলি বাজারের সঙ্গে যুক্ত রিটার্ন বিনিয়োগকারীর হাতে তুলে দেয়। সঙ্গে মূলধন ক্ষতির ঝুঁকিও রয়ে যায়। কম পক্ষে পাঁচ বছরের বিস্তৃতির সঙ্গে আপনি ইক্যুইটির কিছুটা এক্সপোজার নিতে পারেন তবে, শুধু মাত্র আপনার পরামর্শদাতাই আপনাকে বলতে পারবেন, ইক্যুইটি ফান্ডগুলিতে কত টাকা বিনিয়োগ করা যেতে পারে। তাই বলে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ নিয়েও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, যদি সঠিক পথ নির্বাচন করা যায়। সঠিক পথ ধরে এগোলে পিপিএফের ১৫ বছরের দীর্ঘ মেয়াদের অনেক আগেই অনেক বেশি রিটার্ন মিলতে পারে ডেব্ট মিউচুয়াল ফান্ডে।
ধরা যাক কেউ পিপিএফ এবং ইএলএসএস (ইক্যুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম)-এ উভয় ক্ষেত্রে সমান পরিমাণে বিনিয়োগ করেন, ধরে নেওয়া যাক, দুই ক্ষেত্রেই প্রতি বছর ৭৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন।
এ ক্ষেত্রে পিপিএফে বছরে ৮ শতাংশ হারে সুদের হার নির্দিষ্ট রাখলে ১৫ বছর বাদে তিনি হাতে পেতে পারেন ২১,৯৯,৩২১ টাকা। অন্য দিকে ওই একই পরিমাণ টাকা ইএলএসএসে রাখার পর ১২ শতাংশ হারে বার্ষিকীকরণের পর ওই ব্যক্তি ১৫ বছর পরে হাতে পেতে পারেন ৩১,৩১,৪৯৬ টাকা। এই সময়ের মধ্যে প্রতিটি ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির মূল বিনিয়োগ হবে ১১,২৫,০০০ টাকা।
ব্যক্তিগত ভাবে বলা চলে, সঞ্চয় অথবা বিনিয়োগের জন্য বহুমুখি ক্ষেত্র নির্বাচন করতে হবে। এবং সেটা নিজের আর্থিক অবস্থানের নিরিখেই। কিন্তু পিপিএফ থেকে টাকা তুলে নিয়ে তা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ না করাই ভালো। পিপিএফের বাইরে যে টাকা হাতে থাকছে, সেটা নিয়ে মিউচুয়াল ফান্ডে ঝুঁকি নিলেও নেওয়া যেতে পারে।
মতামত লেখকের নিজস্ব। সঞ্চয় বা বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার পরই করা শ্রেয়।