এই বিনিয়োগ প্রকল্পগুলিতে আয়করের ধারা ৮০সি-এর অধীনে করছাড়ের সুবিধা, জানুন বিস্তারিত

বিনিয়োগের জন্য এমন প্রকল্পগুলিই বেছে নেওয়া ভালো, যেখানে আয়করের হাত থেকে কিছুটা হলেও রেহাই মিলতে পারে। আয়কর আইন অনুসারে, প্রত্যেক ভারতীয় আইনত তার আয়ের ন্যায্য অংশ ট্যাক্স দিতে বাধ্য। তবে, এর মানে এই নয় যে আপনাকে পুরো টাকা দিতে হবে। আয়কর আইনের ধারা ৮০সি- এর অধীনে, আপনি প্রতি বছর নিজের কর দায় কমাতে পারেন।

তবে শুরুতেই বলে রাখা ভালো, আপনি ৮০সি-তে করছাড়ের সুবিধা পাবেন তখনই, যদি আপনি পুরানো ট্যাক্স সিস্টেম বেছে নেন। এখন জেনে নেওয়া যাক, কোন প্রকল্পগুলিতে আয়কর আইনের ধারা ৮০সি-এর অধীনে কর বাঁচানো যায়।

ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (NPS)

ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (NPS) হল কেন্দ্রীয় সরকারের চালু করা একটি পেনশন স্কিম যা নাগরিকদের অবসর গ্রহণের পরে পেনশন দিতে শুরু করে। ১৮ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে যে কেউ একটি এনপিএস অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এই স্কিমের অধীনে, আপনি আয়কর আইনের ধারা ৮০সি-এর অধীনে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড়ের জন্য যোগ্য।

এটি ছাড়াও, আপনি ধারা ৮০সিসিডি(১বি)-এর অধীনে ৫০ হাজার টাকার অতিরিক্ত ট্যাক্স সুবিধাও পেতে পারেন।

ইক্যুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম (ELSS)

ইএলএসএস ফান্ড ট্যাক্স সেভিং মিউচুয়াল ফান্ড হিসাবে পরিচিত। আপনি আয়কর আইনের ধারা ৮০সি-এর অধীনে এই ফান্ডে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড় পেতে পারেন। ইএলএসএস ফান্ড শুধুমাত্র তিন বছরের লক-ইন সময়ের জন্য পাওয়া যায়।

ইউলিপ (ULIP)

ইউনিট লিঙ্কড ইন্স্যুরেন্স প্ল্যান (ULIP) হল একটি আর্থিক পণ্য যা গ্রাহকদের একটি একক প্যাকেজে বfমা এবং বিনিয়োগ উভয়ই অফার করে। আয়কর আইনের ধারা ৮০সি-এর অধীনে, আপনি আপনার ইউলিপের জন্য যে প্রিমিয়াম প্রদান করেন তা করছাড়ের জন্য যোগ্য। আপনি প্রতি বছর ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড় পেতে পারেন।

পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF)

পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফ হল সরকার পরিচালিত একটি স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প। এই প্রকল্পে প্রতি ত্রৈমাসিকে সুদের হার নির্ধারণ করা হয়। এই স্কিমে বিনিয়োগ করে, আপনি চাকরি না করেও পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা পেতে পারেন।

এই স্কিমের অধীনে, আপনি ১৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে পারেন এবং প্রতি বছর সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ দেড় লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন। ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পরে, আপনি আরও ৫ বছরের জন্য স্কিমের মেয়াদ বাড়াতে পারেন। পিপিএফ-এ বর্তমানে ৭.১ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যাচ্ছে। এতে বার্ষিক ১.৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগে করছাড়ের সুবিধা রয়েছে।

সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা (SSY)

সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা (SSY) হল একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প। এতে বিনিয়োগ করে অভিভাবকরা তাঁদের মেয়ের শিক্ষা ও বিয়ের খরচের জন্য টাকা জমাতে পারেন। এই প্রকল্পে বিনিয়োগও করছাড়ের জন্য যোগ্য। আপনি প্রতি বছর ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড় পেতে পারেন।

ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (NSC)

এনএসসি হল সেই সমস্ত ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি, যেটির সুদের হার ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পর্যালোচনা করা হয়। একটি সরকার-সমর্থিত নিরাপদ বিনিয়োগ স্কিম। যেখানে কোনো বিনিয়োগকারী মোট পাঁচ বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে পারেন। এই প্রকল্পের আওতায়, সরকার বর্তমানে বার্ষিক ভিত্তিতে ৭.৭ শতাংশ সুদের হার অফার করছে। এই স্কিমের অধীনে, গ্রাহকরা আয়করের ধারা ৮০সি-এর অধীনে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় পান।

৮০ নম্বর ধারা কী

আয়কর আইনের ৮০ ধারা সাধারণ মানুষের হাতে কর থেকে ছাড় পাওয়ার অন্যতম অস্ত্র। আয়কর থেকে ছাড় পেতে এই ধারায় ১২টি উপধারা আছে। তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে। ৮০ নম্বর ধারার যে উপধারার ছাড়ের সুযোগই আপনি নিন না কেন, আপনার কিন্তু ওই ১ লক্ষ ৫০ হাজার পর্যন্তই মোট ছাড় মিলবে এই ধারায়।

৮০ ধারার উপধারাগুলি কী কী

৮০সি (80 C): এই উপধারায় আপনি ছাড় পাবেন কর্মচারী ভবিষ্যনিধি, জীবন বিমা, ইএলএসএস, গৃহঋণের মূল শোধ, বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য স্ট্যাম্প ডিউটির খরচ, সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা, ন্যাশনাল সেভিংস স্কিম, সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম, ইউলিপ, পাঁচ বছরের কর বাঁচানোর ফিক্সড ডিপোজিট, ইনফ্রাস্ট্রাকচার বন্ডের মতো বিনিয়োগে।

৮০সিসিসি (80 CCC): এই উপধারায় অ্যানুইটি পেনশন প্রকল্পে বিনিয়োগ অথবা সেই প্রকল্প থেকে পাওয়া আয়ের উপর ছাড় পাওয়া যায়।

৮০সিসিডি(১) (80 CCD (1): এই উপধারায় ক) বেতন বাবদ আয়ের ১০ শতাংশ, খ) স্বনিযুক্ত হলে সামগ্রিক বাৎসরিক আয়ের ২০ শতাংশ অথবা গ) এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এই তিনের মধ্যে যেটি সব থেকে কম তার উপরে করছাড় মেলে।

৮০সিসিডি (১বি) (80 CCD (1B): এনপিএস প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য অতিরিক্ত ৫০ হাজার ছাড়। অটল পেনশন যোজনা থেকেও এই উপধারায় ছাড়ের সুযোগ রয়েছে।

৮০সিসিডি (২): চাকুরিরতদের জন্য এনপিএসে বিনিয়োগে ছাড়।

আরও পড়ুন: উৎসবের মরশুমে ক্রেডিট কার্ডের যথেচ্ছ ব্যবহারে ফতুর হয়ে যেতে পারেন, মেনে চলুন এই টিপস

বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখেন ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিকরা। সমস্ত তথ্য যাচাই করে তবে বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.