অনলাইনে ছাড়ের ধাক্কায় চেনা ভিড় নেই হাতিবাগান, গড়িয়াহাটে

griahat

চিরস্মী পাল : একে বৃষ্টি তায় আবার অনলাইনে কেনাকাটায় ব্যাপক ছাড়, সব মিলিয়ে পুজোর ১২ দিন আগে চেনা ভিড় চোখে পড়ল না হাতিবাগান, গড়িয়াহাটে। একই ছবি বেহালা ও নিউমার্কেটেও।

ক্যালেন্ডার বলছে মাত্র ১২ দিন পর ষষ্ঠী। কিন্তু, তাও দোকানগুলোর সামনে ক্রেতার সংখ্যা হাতেগোনা। তবে, বেচাকেনার এই ভাটার জন্য বিক্রেতারা অনলাইনে সস্তায় জিনিসের ছড়াছড়িকেই দায়ী করছেন। সঙ্গে আর্থিক মন্দা তো রেয়েছেই।

গড়িয়াহাটের এক শাড়ির দোকানের কর্মী বলেন, “বৃষ্টি টা বড় কথা নয়। পুজোর আগে প্রতিবারই কম বেশি বৃষ্টি হয়। কিন্তু তার জন্য সেভাবে খদ্দের কমে যায় না। যারা কেনার তাঁরা বৃষ্টি হলেও কিনতে আসেন । কিন্তু, এবারে যেন অনেকটাই মার খাচ্ছে বাজার।” তাঁর কথায়, “বেশিরভাগ মানুষই অনলাইন সাইটে জিনিসের দাম মিলিয়ে সরে যাচ্ছেন।’’

আর্থিক মন্দার দিকেও আঙুল তুলছেন অনেক ব্যবসায়ীরা। খরচখরচা সব মিলিয়ে দোকানের জিনিসের দাম অনলাইনের তুলনায় প্রায় ২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু অনলাইনে দোকান চালানোর খরচ নেই। ফলে তারা অনেকটা কম দামে তারা জিনিসপত্র দিতে পারছে।

তাছাড়া অর্ডার করলে বাড়িতে বসে জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। তাই ক্রেতারা খরচ বাঁচাতে অনলাইনেই ভরসা রাখছেন। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে পুজোর বাজার করতে আসা এক মধ্যবিত্তের কথায়, গত কয়েকবছরে জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুলেও বেতন বাড়েনি। অনলাইনে অনেক সস্তায় ভালো জিনিস মিলছে। তাই দোকান ঘুরলেও জিনিস না ফিরে যাচ্ছেন অনেকে। পরে অনলাইনে অর্ডার দিচ্ছেন সেই জিনিস।

অনেক বিক্রেতা আবার দোকানের পাশাপাশি অনলাইনেও জামাকাপড় বা অন্যান্য সমাগ্রী বিক্রি শুরু করেছেন।

পোশাক বিক্রেতা শিল্পী গায়েন বলেন, “হাতিবাগানে আমার একটি ছোট বুটিক আছে। আগের বছরও প্রায় ১৩ হাজার টাকার বিক্রিবাটা হয়েছিল। কিন্তু এবছর প্রথম থেকেই মন্দা অনলাইনে বাধ্য হয়ে ১০% ছাড় দিয়ে নিজের পোশাকের কালেকশন দিতে শুরু করি। দোকানের তুলনায় বেশি লাভ হচ্ছে।’
নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা রবিবার ব্যবসার আশায় থাকলেও কিছুটা বাদ সাধে বৃষ্টি। পুজোর আগে যেখানে রবিবারগুলোতে ছোট ব্যবসায়ীরা ৩-৪ হাজার টাকার ব্যবসা করে থাকেন সেখনে সেই বিক্রেতারাই এদিন দিনের শেষে বিক্রি করতে পারলেন মাত্র ৩ পিস জামা-কাপড়। বিক্রিবাটার ছবিটা গড়িয়াহাটেও এক।

ভিন রাজ্য থেকে আসা ক্রেতাও এবার তেমন চোখে পড়ছে না এই তল্লাটে। পুজোর আগে বিদেশি পর্যটকদের থেকে ১৫% বেশি লাভ করতেন বলে দাবি করেন কাপড় ব্যবসায়ীরা।

গড়িয়ার এক প্রবীণ ব্যবসায়ী শিশির দত্তের কথায়, ‘কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক সংস্কারের নামে যে ভাবে একের পর এক পদক্ষেপ করছে, তার ধাক্কা তো সবাইকেই সামলাতে হবে।আগে তো এই সময়ে গড়িয়াহাটের রাস্তায় মানুষ হাঁটতে পারত না। এখন সে সবই উধাও।’ দুপুর থেকে বৃষ্টির জন্য বেরোতে না পারলেও সন্ধের দিকে দোকানগুলোতে ঘুরতে চলে এসেছিলেন কলেজপড়ুয়া স্নেহা বকশী। কিন্তু, সমস্ত জিনিসেরই দাম অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় বেশ হতাশ মনে ফিরতে হল তাঁকে।

পড়তে পারেন : এটিএম কার্ডের লেনদেন ব্যর্থ হলে আর্থিক ক্ষতিপূরণ চালু পাঁচ দিন পর থেকেই!

বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখেন ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিকরা। সমস্ত তথ্য যাচাই করে তবে বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.