টাকা তুলতে গিয়ে এটিএমে কার্ড আটকে গেছে? সময় নষ্ট না করে সতর্ক হয়ে যান

এটিএম

এটিএমে টাকা তুলতে গিয়ে অস্বাভাবিক ঘটনার মুখোমুখি হতে পারেন যে কেউ। আপনার সঙ্গে কখনও কি এমন ঘটনা ঘটেছে, যখন এটিএমে নিজের ডেবিট কার্ড দিলেন, আর তার পরেই মেশিনে আটকে গেল সেই কার্ড? নিরাপত্তা কর্মী নেই এমন কোনো এটিএমে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ঘাবড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে এই ঘটনা মোটেই নজিরবিহীন নয়। বিভিন্ন সময়েই অনেক জায়গায় এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় গ্রাহককে।

কার্ড দেওয়ার পর অন্য বিবরণগুলি দিতে দেরি করলে, বিদ্যুৎ সংযোগে বিভ্রাট ঘটলে, একাধিক বার ভুল তথ্য দিলে, যান্ত্রিক গোলযোগে, কানেকশনে ত্রুটি দেখা দিলে, এমনকী খারাপ আবহাওয়ার কারণেও মেশিনে কার্ড আটকে যেতে পারে। এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হলে সতর্ক হয়ে যান। কারণ, প্রতারকরা এ ভাবেই ডেবিট কার্ডের ক্লোন করে আপনার কষ্টার্জিত অর্থ নিমেষে হাতিয়ে নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে যখন বুঝতে পারলেন যে আপনি প্রতারিত হয়েছেন, ততক্ষণে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লুঠ হয়ে গিয়েছে।

লাইভমিন্ট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বাস করা কঠিন, তবে এ ধরনের ঘটনা সত্য। এই ধরনের অনেক চক্র ডেবিট কার্ড হোল্ডারদের সাহায্য করার আড়ালে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে।

কার্ডটি মেশিনে আটকে গেলে এটিএম স্ক্রিনে ব্যালেন্সের পরিমাণ, ফোন নম্বর এবং অন্যান্য বিবরণ দেখাতে শুরু করে। সে সময়ই আপনাকে সাহায্য করার জন্য কয়েক জন ভিতরে চলে আসবে। তাদের মধ্যে এক জন কার্ডটি বের করার জন্য আপনার সঙ্গে কথা বলবে, আর সেই সুযোগে অন্যজন কার্ডের ক্লোন করে ফেলবে। এর পর তারা সেখান থেকে কেটে পড়বে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলার মেসেজ ঢুকতে থাকবে আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে।

আতঙ্কিত হয়ে আপনি যখন কার্ড ব্লক করার জন্য ব্যাঙ্কে ফোন করছেন, তার আগেই আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক হাজার গায়েব হয়ে গেছে। এমনিতে কার্ড ডিঅ্যাক্টিভেশন প্রক্রিয়া একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কারণ ব্যাঙ্কগুলির এই ধরনের সমস্যাগুলি পরিচালনা করার জন্য কোনো সর্বক্ষণের কর্মী বা টিম নেই। ফলে কার্ড ব্লক হয়ে যাওয়ার আগেই আরও কয়েক হাজার টাকা চলে যাবে।

এ ব্যাপারে নিরন্তর সজাগ করে চলেছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ‘আরবিআই কেহতা হ্যায়…’ স্লোগান দিয়ে ডিজিটাল মিডিয়ায় গ্রাহকদের সচেতন করে চলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। আরবিআর-এর পরামর্শ অনুসরণ করে, আপনি নিজের ব্যাঙ্কের শাখায় যাবেন এবং একই সঙ্গে সাইবার ক্রাইম শাখায় মামলা করবেন, এই ভেবে যে তারা আপনার টাকা ফেরত পেতে সাহায্য করবে। কিন্তু ব্যাঙ্ক তো আপনাকে বরাবর বলে আসছে, নিজের পিন কখনোই কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। আর সাইবার ক্রাইম শাখায় এ ধরনের অভিযোগের পাহাড় জমে রয়েছে। আপনার অভিযোগও সেই পাহাড়ে চাপা পড়বে।

আরবিআই-এর তথ্য অনুসারে, ২০২১-২২ সালে ‘কার্ড/ইন্টারনেটএটিএম/ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড এবং ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং’ সম্পর্কিত ৬৫ হাজার ৮৯৩টি জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। সবমিলিয়ে যার পরিমাণ ২৮৫.৬২ কোটি টাকা!

এটিএমে কার্ড আটকে গেলে কী করবেন

এমন পরিস্থিতে প্রথমেই আতঙ্কিত হলে চলবে না। ধীরস্থির ভাবে সমস্যা মেটাতে হবে। মনে রাখবেন, মেশিনে আটকে থাকা এটিএম কার্ড বের করা সহজ কাজ নাও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে যা করতে হবে-

১. ট্রানজাকশন ক্যানসেল করতে হবে। ক্যানসেল বোতাম টিপে কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করতে হবে।

২. ট্রানজাকশন ক্যানসেল হয়েছে কি না, তা জানতে ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ্কের কাস্টমার কেয়ার নম্বরে ফোন করুন। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই কার্ড ব্লক করুন।

৩. ব্যাঙ্কের নাম, সময় এবং অবস্থান সহ ঘটনাটি রিপোর্ট করুন। কিন্তু বাইরের কোনো অপরিচিতর কাছ থেকে সাহায্য নিতে যাবেন না।

৪. এটিএম-এর সঙ্গে কোনো অস্বাভাবিক ডিভাইস লাগানো রয়েছে নজরে পড়লে কোনো লেনদেন করবেন না।

বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখেন ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিকরা। সমস্ত তথ্য যাচাই করে তবে বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.