বিবি ডেস্ক: পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (Public Provident Fund) বা পিপিএফ (PPF)। যে কোনও পোস্ট অফিস বা ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট থাকলেই এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারেন গ্রাহক। ১৯৬৮ সালে ন্যাশনাল সেভিংস অর্গানাইজেশন (National Savings Organization) এই স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পটি শুরু করে। সরকারি প্রকল্প হওয়ায় ঝুঁকিহীন বিনিয়োগের পাশাপাশি যথেষ্ট আর্থিক সুরক্ষা দিতে পারে এই প্রকল্প। রয়েছে দারুণ সুদের হার এবং আয়কর ছাড়ের সুবিধাও। সময়ে-সময়ে সামান্য কিছু অর্থ জমা করে দীর্ঘ মেয়াদে বিশাল অর্থ ফেরত দেয় এই পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (Public Provident Fund)।
বিনিয়োগের নিয়ম
নিয়ম অনুযায়ী, স্বল্প বিনিয়োগের এই প্রকল্পে বছরে ন্যূনতম ৫০০ টাকা জমা রাখতে হয়। তবে কোনও ভাবেই বছরে দেড় লক্ষ টাকার বেশি রাখা যাবে না। কিস্তির পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ১২টি। পিপিএফের (PPF) ক্ষেত্রে এই ধরনের সরকারি নির্দেশিকা জারি রয়েছে। প্রতি মাসে কোনও বিনিয়োগকারী সর্বাধিক সাড়ে ১২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন। এতে রিটার্নের পরিমাণও দারুণ। অর্থ জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর সুবিধা অনুযায়ী এক সঙ্গে বড় অঙ্কের টাকা জমা করতে পারেন অথবা কিস্তিতেও জমা করতে পারেন। সরকারি এই স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের মেয়াদ ১৫ বছর। তবে কোনও গ্রাহক চাইলে আরও এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে পারেন।
বর্তমানে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে (Public Provident Fund) সুদের হার কমিয়ে ৭.১ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু বলা বাহুল্য, অন্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এখনও অনেকটাই বেশি সুদ দিচ্ছে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (Public Provident Fund)। এই প্রকল্পে সরকার মার্চের পর সুদ দেয়। আপনি চাইলে নিজের নামে, কিংবা নাবালকের অভিভাবক হিসেবেও পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।
আয়কর নিয়ম (Income Tax) অনুযায়ী, কর ছাড়ের সুবিধাও রয়েছে এই প্রকল্পে। এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করে কোনও বিনিয়োগকারী আয়করের ৮০সি ধারার অধীনে সর্বোচ্চ দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড়ের সুবিধা নিতে পারেন।
কোটিতে পৌছনোর অঙ্ক
অঙ্কের হিসেব বলছে, পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে (Public Provident Fund) মাসিক মাত্র সাড়ে ১২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে আপনি কোটিপতি হতে পারেন। পিপিএফের নিয়ম অনুযায়ী এক বছরে সর্বোচ্চ দেড় লক্ষ টাকা এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন গ্রাহক। প্রতি মাসে আপনাকে প্রাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে (Public Provident Fund) সাড়ে ১২ হাজার টাকা (সর্বোচ্চ) জমা করতে হবে। এই ভাবে ১৫ বছর টাকা রাখার পর আরও পাঁচ বছর এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে পারেন। তবে এই প্রকল্প থেকে এক কোটি টাকা পেতে হবে বিনিয়োগের সময়কাল করতে হবে ২৫ বছর। তত দিনে দেড় লক্ষ টাকার বার্ষিক আমানতের ভিত্তিতে সাড়ে ৩৭ লক্ষ টাকা জমা হয়ে যাবে। এই অর্থের ওপর বার্ষিক ৭.১ শতাংশ হারে ৬৫ লাখ ৫৮ হাজার ১২ টাকা সুদ পাওয়া যাবে। একই সময়ে মেয়াদকাল পূর্ণ হওয়ায় পরিমাণ তত ক্ষণে দাঁড়াবে এক কোটি তিন লক্ষ ৮ হাজার ১২ টাকা।
পিপিএফ অ্যাকাউন্টের মেয়াদ ১৫ বছর। যদি ১৫ বছর পর এই মেয়াদ বাড়াতে চান তা হলে পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে ২৫ বছর থেকেই শুরু করতে পারেন এই বিনিয়োগ। যত তাড়াতাড়ি এই সরকারি প্রকল্পে টাকা রাখবেন, তত বেশি সুবিধা পেতে পারবেন আপনি। যদি ২৫ বছর থেকে বিনিয়োগ শুরু করেন, তা হলে প্রতি বছর এই অ্যাকাউন্টে দেড় লক্ষ টাকা করে রাখলে ৫৫ বছরে আপনি কোটিপতি হয়ে যাবেন। অর্থাৎ আপনার অবসর জীবন শুরু হওয়ার পাঁচ বছর আগেই পেয়ে যাবেন এই অর্থ।
কী ভাবে খুলবেন পিপিএফ অ্যাকাউন্ট
যে কোনও পোস্ট অফিস বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সেভিংস অ্যাকাউন্ট থাকলেই কোনও বিনিয়োগকারী পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে নথি হিসেবে প্যান কার্ড, আধার কার্ড ও একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবির প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি যে পরিমাণ অর্থ জমা করতে চান সেটাও ওই দিনই জমা করতে হয়। ব্যাঙ্ক অথবা পোস্ট অফিসে পিপিএফ অ্যাকাউন্টের একটি ফর্ম পাওয়া যায়। সেটিতে সমস্ত তথ্য ভরে জমা দিলেই আপনার পিপিএফ অ্যাকাউন্ট চালু হয়ে যাবে।
বর্তমানে ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে সরাসরি গিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার বদলে বাড়িতে বসে অনলাইনেই পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা দিচ্ছে ব্যাঙ্কগুলি। মনে রাখবেন, পিপিএফ-এ বিনিয়োগ করার জন্য নির্দিষ্ট কোনও অঙ্ক নেই। মাসে ৫০০ টাকার উপরে এবং সাড়ে ১২ হাজার টাকার নীচে বিনিয়োগ করা যায়।
আরও পড়ুন: ইউপিআই এবং ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও আয়কর দিতে পারবেন, জানুন পদ্ধতি