রূপসা ঘোষাল: আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির জের পড়েছে হেঁসেলে। রোজকার বাজারে সবজি কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে মধ্যবিত্তের। আর এর মধ্যেই বাজারে ফোঁড়ে বা দালালচক্রের কালোবাজারি রুখতে আসরে নেমেছে নবান্ন। সরষের মধ্যে ভূত খুঁজতে শুক্রবার সকাল থেকে কলকাতা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের আধিকারিকরা ঘুরছেন কলকাতার সমস্ত ছোট-বড় সবজি বাজারগুলোতে। কিন্তু ঠিক কীভাবে সবজি বাজারে দাপট জমিয়েছে এই দালালরা? তবে কি আলু-পেঁয়াজ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্ত সবজির দামবৃদ্ধির জন্য এই দালালরাই দায়ী?
উত্তরের বেলেঘাটা হোক কিংবা দক্ষিণের লেকমার্কেট, ৬০ টাকার প্রতি কেজির নিচে মিলছে না কোনও সবজিই। গত এক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজ বিকচ্ছিলো ৭০ টাকা প্রতি কেজি যা শুক্রবার সকালে বেহালা বাজারে দাঁড়িয়েছে ৯০ টাকায়। বেহালা বাজারের এক বিক্রেতা বিনোদ দত্ত জানান যে দু’হাত ঘুরে তাঁর কাছে আলু আসছে। ১৮-১৯ টাকা কেজি প্রতি কেন পড়ছে বলেই তাঁকে বিক্রি করতে হচ্ছে ২০ টাকায়।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ভাঙড়ে এই মরসুমে ব্যাপক ফলন হওয়া সত্ত্বেও বুলবুলের আতঙ্ক সৃষ্টি করে একদল অসাধু ব্যবসায়ী চড়া দাম হাঁকছে। এছাড়াও গ্রাম থেকে শহরের হাটগুলোতে আসার পথে এই অসাধু কারবারির লোকজন চাঁদা নেওয়ার নামে জুলুম খাটাচ্ছে কৃষকদের ওপর। মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্যই কৃষকরা যে ক্ষতির মুখে পড়ছেন তা স্বীকার করেছেন সমস্ত বিক্রেতারাই। আর সেই কারণে সামান্য লাভের জন্য দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরাও।
বিক্রেতা বিনোদ দত্ত বলেন, ‘মধ্যস্বত্বভোগীদের চাপে ৫৫ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ এখন কলকাতা ও শহরতলীর বাজারগুলোতে আসছে ৭০-৯০ টাকায়। যা চাষিদের কাছ থেকে তারা কেনে ৩২-৩৫ টাকা প্রতি কেজিতে।’ সাপ্লাই চেনের মধ্যে মধ্যস্বত্বভোগীরা ঢুকে পড়ায় শুধু যে ক্রেতারাই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তা নয়। নিজেদের ন্যায্য পাওনা তর্কে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষীরাও।
শহরের সবজি বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, যে শহরের বাজারগুলোতে সবজি আসার আগে চাষীদের জমিতে হাজির হয় এই দালাল বা ফোঁড়েরা। ফলে কম টাকায় সবজি কিনে বেশি দামে খুচরো বাজারে বিক্রি করে তারা চাষী এবং ব্যবসায়ী উভয়েরই ক্ষতি করছে। বিনোদবাবুর কথায়, ‘উল্লেখযোগ্যভাবে একজন নয়, চাষের জমি থেকে বাজারে সবজি পৌঁছনো পর্যন্ত কাজ করছে ৬-৭ জন ফোঁড়ে। তাই বিক্রেতাদের ওপর সাধারণ মানুষের এই আক্ষেপ যে সঠিক নয় তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিতে চাই আমরা। পুলিশের লোক আমাদের জিজ্ঞেস করতে এলে সত্য ঘটনা জানাবো তাঁদের।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক বিক্রেতাই তাঁর সবজির চাহিদা অনুযায়ী মাল আনায়। সেক্ষেত্রে যোগান কম থাকলে আমরা তো মালই পেতাম না। যোগানের সমস্যার থেকেও বড় হল এই ফোঁড়ে। সাত হাত ঘুরে আসলে সবজির দাম তো বাড়বেই।’
সবজির এই সাপ্লাই চেনে দালালরাই মূল ঘুঁটি হয়ে উঠেছে। প্রত্যেক দালাল ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা অনুযায়ী চাষিদের থেকে সবজি তুলে মজুদ রাখে। এরপর বাজারের চাহিদা বুঝে পরিবহন খরচ এবং আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে তা চড়া দামে বিক্রি করে।
ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এবং নবান্ন দ্বারা গঠিত টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য প্রভাত দাস এ প্রসঙ্গে নিজে স্বীকার করেছেন কলকাতার সবচেয়ে বড় সবজির বাজার কোলে মার্কেটে তিন স্তরে মধ্যস্থতাকারীরা কাজ করছে। একেক জন মধ্যস্থতাকারীর থেকে সবজি আসে প্রায় দ্বিগুণ দামে।
জানা গিয়েছে, কলকাতার খুচরো বাজারে ৭০ থেকে ৯০ টাকা প্রতি কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হওয়ার খবরে রীতিমত স্তম্ভিত কৃষকরা। কারণ কলকাতা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে নিজেদের চাষের জমিতে সেই পেঁয়াজ উৎপাদন করে তারা মাত্র ৩৫ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি করছে দালালদের হাতে।