জিআই তকমা পেলেও কেন বাড়েনি দার্জিলিঙের গ্রিন এবং হোয়াইট টির চাহিদা

রূপসা ঘোষাল : ‘এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই…’। অবশেষে জিআই তকমা পেল দার্জিলিং চা। সম্প্রতি, এই স্বীকৃতি আদায় করছে দার্জিলিংয়ের গ্রিন এবং হোয়াইট টি। অক্টোবর থেকে জিআই অফ গুডস অ্যাক্ট ১৯৯৯-এর অধীনে নথিভুক্ত করা হয়েছে এই দুই চাকে।

কিন্তু সত্যিই কি বাঙালি এই দুই চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে? অন্তত কলকাতা বাজারের পরিসংখ্যান তো তা বলছে না। প্রতিবছর ৮৫ লক্ষ কেজি চা উৎপাদন হয় দার্জিলিংয়ে। তার মধ্যে গ্রীন টির পরিমাণ ১০ লক্ষ কেজি এবং হোয়াইট টির পরিমাণ এক লক্ষ কেজি। কিন্তু, বিক্রির পরিমাণ একেবারেই সীমিত। নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক ছাড়া এই চায়ের বিষয়ে তেমন আগ্রহ নেই সাধারণ রোজকার ক্রেতাদের। তেমনটাই জানাচ্ছেন শহরের একাধিক চা বিক্রেতারা।

লালবাজারের বহু পুরোনো চায়ের দোকান দার্জিলিং টি কোম্পানির মানিক ঘোষ বলেন, ‘‘সেই ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে টি-বোর্ডের তরফে এই দুই চায়ের জিআইএর জন্য আবেদন করা হয়েছিল। আরও অনেক আগেই পাওয়া উচিত ছিল তকমা। তবে যাই হোক এই তকমার কোনও প্রভাব পড়েনি সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে। আসলে গ্রিন টি এবং বিশেষ করে হোয়াইট টির মূল্য এতটাই বেশি যে সাধারণ ক্রেতাদের সেগুলো কেনার ক্ষমতা থাকে না।

৫০০ টাকা প্রতি কেজি থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে গ্রিন টি। হোয়াইট টি শুরু হয় ৮ হাজার টাকা প্রতি কেজি দিয়ে। তাই যেখানে ২০০ টাকা প্রতি কেজিতে দার্জিলিং চা এবং ১২০ টাকা প্রতি কেজিতে অসমের সিটিসি চা মেলে সেখানে কেন সাধারণ মানুষ এত পয়সা খরচ করে রোজকার চা খাবে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘জিআই তকমার প্রচার করতে গিয়ে আমাদের হয়তো বলতে হবে গ্রিন টি এবং হোয়াইট টির গুণাগুণের কথা। কিন্তু তা সত্ত্বেও এর আকাশছোঁয়া দামের জন্যই হয়তো সাধারণ মানুষজন এই চা কিনবে না।’’

দুটো চা পাতার মাঝের বোঁটা যা বেবি বার্ড নামে পরিচিত তা তুলে তুলে তৈরি হয় এই হোয়াইট টি। একটা চা বাগানে একবারে মাত্র ২ কেজি হোয়াইট টি তৈরি করা যায় বলেই জানা গিয়েছে। সেক্ষেত্রে দাম অনেকটাই বেশি হয়ে থাকে বলে জানাচ্ছেন লালবাজারেরই ধ্রুব টি সেন্টার, জৈন টি কোম্পানির মতো বিক্রেতারা।

ধ্রুব টি সেন্টারের এ দত্ত বলেন, ‘‘বাজার খুব খারাপ। জিআই তকমা বিক্রি একটুও বাড়ায়নি। আমাদের এখানে গ্রিন টি পাওয়া যায় ৬০০ টাকা কেজি এবং হোয়াইট টি পাওয়া যায় ৬ হাজার টাকা কেজি দরে। তবে এর কোনও রোজকার গ্রাহক নেই। নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক আছে যাদের ক্রয় ক্ষমতা রয়েছে তারাই মাঝে মধ্যে এসে নিয়ে যান।’’

বিক্রি কম হওয়ায় এই দোকানের সল্টলেক এবং গোলপার্কের ব্রাঞ্চে রাখা হয় না গ্রিন এবং হোয়াইট টি। জৈন টি কোম্পানিতেও রোজকার খরিদ্দারেরা এই চা কেনেন না। ৮ হাজার টাকা মূল্যের হোয়াইট টি কিনতে কেবল সৌখিন চা প্রেমীরাই আসেন।
হাইকোর্ট এলাকার চা বিক্রেতা সি এন মিত্রের দোকানে পাওয়া যায় চামঙ্গ ইন্ডিয়া কোম্পানির চা। তারা অনলাইনের মাধ্যমে বাংলার বাইরে হোয়াইট টি বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু দোকানে ক্রেতার অভাবে এই দামী চা রাখেন না। যদিও রয়েছে গ্রিন টি। ২০০ এবং ৩০০ টাকায় পাওয়া যায় ২০-২৫ টি ব্যাগ। গ্রীন টি পাতা বিক্রি হয় ৪০০-১৪৫০ টাকা প্রতি কেজিতে।
যদিও শহরের সৌখিন চা প্রেমীদের জন্য এই দুই চা পাওয়া যায় শপিং মলে। সাউথ সিটি, অ্যাক্রপলিস মলে ২৫-৯৯ টাকা প্রতি কাপে বিকোয় হোয়াইট ও গ্রীন টি।

চা বিপণি টি ট্রওভের তরফে শ্রুতি কানোই বলেন, ‘‘অনেক চা প্রেমী রয়েছেন শহরে যারা আমাদের এখানে এসে হোয়াইট টি খোঁজেন। দামী হলেও এর গুণাগুণ এবং সুগন্ধের জন্য এই চা অনেকেই ভালোবাসেন। এমনকী আমাদের এখানে এই চা কীভাবে খেতে হয় তাও বানিয়ে দেখিয়ে দেখানো হয় গ্রাহকদের। চুমুক দিয়ে ভালো লাগলে তবেই কেনেন ক্রেতারা।’’

বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখেন ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিকরা। সমস্ত তথ্য যাচাই করে তবে বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.