ক্রিকেট বিশ্বকাপ যেন বুস্টার ডোজ! ভারতীয় অর্থনীতিতে যোগ হতে পারে ২২,০০০ কোটি টাকা

cricket

ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ দিয়ে আজ থেকে (৫ অক্টোবর ২০২৩) থেকে শুরু হয়ে গেল আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এ বার ভারতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এমন পরিস্থিতিতে ভারতে বিশ্বকাপ আয়োজন দেশের অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

আগামী ৫০ দিন ক্রিকেট নিয়ে মেতে থাকবে দেশ। দীর্ঘ চার বছর পর চলছে নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খোঁজ। কে হবে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শাসক, তা জানা যাবে আগামী ২০ নভেম্বর। তার আগে, আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে ব্যাঙ্ক অব বরোদা। এই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের রিপোর্টে বলা হয়েছে, কী ভাবে বিশ্বকাপের কারণে ভারতের জিডিপি ২২,০০০ কোটি টাকা বা ২.৬৫ বিলিয়ন ডলারের বুস্টার ডোজ পেতে পারে।

ব্যাঙ্ক অব বরোদার রিপোর্ট

ব্যাঙ্ক অব বরোদার অর্থনীতিবিদ জাহ্নবী প্রভাকর এবং অদিতি গুপ্তা এই রিপোর্ট তৈরি করেছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৫ অক্টোবর থেকে ক্রিকেট জ্বরে কাবু হবে দেশ। এই নিয়ে চতুর্থ বারের মতো ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ৪৫ দিন ধরে দেশের ১০টি স্টেডিয়ামে মোট ৪৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। সবমিলিয়ে অন্তত ২৫ লক্ষ মানুষ ৪৮টি ম্যাচ স্টেডিয়ামে বসে চাক্ষুষ করবেন। এ ছাড়া বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ নিজের ঘরে বসে টুর্নামেন্ট‌টি উপভোগ করবেন। এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করে সরাসরি লাভবান হবে ভারতীয় অর্থনীতি। কী ভাবে?

সারা বিশ্বের মানুষ ভারতে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখতে আসছেন। ফলে টিকিট বিক্রি থেকেও প্রচুর আয় হবে। এর বাইরে এভিয়েশন ট্রান্সপোর্ট ইন্ডাস্ট্রি লাভবান হবে। হসপিটালিটি সেক্টরে হোটেল, ফুড ইন্ডাস্ট্রি এবং ডেলিভারি সার্ভিসের ব্যবসায় ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকছেন। এ ছাড়া পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বড়ো ধরনের বৃদ্ধি হতে পারে। ক্রিকেট বিশ্বকাপের পাশাপাশি সামনে উৎসবের মরশুমও রয়েছে, তাই খুচরো চাহিদার প্রবল বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাবে।

দর্শনে আয়

প্রতিটি সেক্টরে প্রভাবের কথা মাথায় রেখে বিশ্বকাপ থেকে আয়ের রিপোর্ট তৈরি করেছে ব্যাঙ্ক অব বরোদা। ম্যাচের টিকিট কিনতে ১৬০০ থেকে ২২০০ কোটি টাকা খরচ করতে পারেন দর্শক।

এছাড়াও, টিভি, ওটিটিতে টুর্নামেন্টটি দেখার দর্শকের সংখ্যা ২০১৯ বিশ্বকাপের ৫৫২ মিলিয়নেরও বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্পনসর টিভি সত্ত্বের জন্য কমপক্ষে ১০৫০০ থেকে ১২০০০ কোটি টাকা মিলবে বলে আশা করা হচ্ছে। যার মধ্যে ডিজিটাল এবং টিভি মাধ্যমের অফিসিয়াল সম্প্রচার সত্ত্বের পাশাপাশি ইভেন্ট চলাকালীন বিজ্ঞাপনের জন্য প্রধান স্পনসরদের খরচও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

যাতায়াত, হোটল এবং খাবার

বিশ্বকাপ চলাকালীন, দলগুলি দেশের এক কোণ থেকে অন্য কোণে ভ্রমণ করবে। যার জন্য ১৫০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। যার মধ্যে হোটেলে থাকার খরচও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দল ছাড়াও আম্পায়ার ও ধারাভাষ্যকাররাও থাকবেন। বিদেশি পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করবে বিশ্বকাপ।

যদি প্রতি ম্যাচের জন্য পর্যটকের সংখ্যা হাজারখানেকও ধরে নেওয়া হয়, তাহলে এই পর্যটকদের হোটেল, খাবার, ভ্রমণ এবং কেনাকাটাতে ৪৫০ থেকে ৬৫০ কোটি টাকা খরচ হবে। দেশীয় পর্যটকরাও খাবার ও হোটেলের জন্য খরচ করবেন। বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখতে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যাবেন তাঁরা। যার জন্য ১৫০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। নিজের শহরে কোনো ম্যাচ দেখতে খাবার এবং জ্বালানির জন্য ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা খরচ করবেন স্থানীয় দর্শকরা।

বিবিধ খরচ

বিশ্বকাপ চলাকালীন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, গিগ কর্মী এবং নিরাপত্তার জন্য ৭৫০ থেকে ১০০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে, খেলাধুলো সম্পর্কিত পণ্য এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক পণ্যদ্রব্য কেনার জন্য ১০০ থেকে ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করবেন দর্শক। রেস্তোরাঁ, ক্যাফেতে ম্যাচের স্ক্রিনিং এবং ঘরে বসে অ্যাপের মাধ্যমে খাবার অর্ডার করলে পুরো টুর্নামেন্টে ৪০০০ থেকে ৫০০০ কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে।

এই যাবতীয় খরচ যোগ করলে ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলাকালীন মোট ব্যয় ধরা যেতে পারে ১৮,০০০ থেকে ২২,০০০ কোটি টাকা। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, যার সুফল দেখা যাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতের জিডিপি-তে। এই ইভেন্টের সময়, টিকিট বিক্রি, হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং খাবার সরবরাহের উপর জিএসটি সংগ্রহের মাধ্যমে কর রাজস্ব আকারে বিপুল আয় উপার্জন করবে সরকার।

আরও পড়ুন: উৎসবের মরশুমে ক্রেডিট কার্ডের যথেচ্ছ ব্যবহারে ফতুর হয়ে যেতে পারেন, মেনে চলুন এই টিপস

বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখেন ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিকরা। সমস্ত তথ্য যাচাই করে তবে বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.