বন্ডে বিনিয়োগে মিলতে পারে দারুণ লাভ! কী ভাবে বিনিয়োগ করবেন জেনে নিন

bond

বিবি ডেস্ক: আয় যেমনটাই হোক, ব্যয়কে নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে বেঁধে রেখে সঞ্চয়ের পথ ধরাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুসংহত পরিকল্পনা নেওয়াও সঞ্চয়ের মূল চাবিকাঠি। বাজারে এমন কয়েকটি বিনিয়োগ পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম বন্ড (Bond) ।

বন্ড কী

বন্ড হল একধরনের চুক্তি বা ঋণপত্র যেখানে সরকার কিংবা সংস্থা ঋণ হিসাবে কোনও ব্যাক্তি বা সংস্থার থেকে নির্দিষ্ট সুদে টাকা নেবে এবং নির্দিষ্ট একটি সময় পরে কোম্পানি টাকা দেবে।

আরও সহজ ভাষায় বন্ড হল, ইস্যুকারী এবং ধারকের মধ্যে একটি লিখিত চুক্তিপত্র। যেখানে ইস্যুকারী ধারককে বন্ডের লিখিত চুক্তি অনুযায়ী সুদের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়। বন্ড সাধারণত বড় প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায় তৈরি করা হয়। মূলত জাতীয় সরকার, কর্পোরেশন এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে।

একটু সহজ করে বলা যাক। ধরা যাক আপনি নতুন একটি বাড়ি কিংবা গাড়ি কিনবেন। কিন্তু সেই সময় আপনার কাছে টাকা নেই। তখন আপনি ব্যাঙ্কের কাছে নির্দিষ্ট সময় ও নির্দিষ্ট সুদের হারে টাকা ধার নিতে পারবেন। বেশির ভাগ মানুষ ব্যবসা শুরু করার সময় টাকা ধার করে থাকেন। নতুন ব্যবসা শুরু করতে বা ধীরে ধীরে তা বৃদ্ধি করতে ব্যবসাগুলির প্রায়ই ঋণের প্রয়োজন হয়। অন্য দিকে কর্পোরেশনগুলির নিজস্ব তহবিল বাড়ানোর জন্য একটি কার্যকরী উপায় হল বন্ড ইস্যু করা।

বন্ডের প্রকারভেদ

বন্ডে বিনিয়োগের সময়সীমা স্বল্পমেয়াদী, দীর্ঘমেয়াদী এবং মেয়াদবিহীন হতে পারে। সাধারণত এক্সচেঞ্জ মার্কেট এবং ওটিসি উভয় জায়গা থেকে বন্ড কেনাবেচা হয়। পাশাপাশি বন্ড সরকারি ও বেসরকারি উভয়ই হতে পারে। বন্ড মূলত ছ’প্রকারের হয়। প্রথমেই আসা যাক সিকিওরড বন্ডের (Secured Bond) বিষয়। আসলে এই বন্ডগুলো ঋণ দেওয়ার সময় সিকিউরিটি হিসাবে কিছু জমা নিয়েই ঋণ দেয়। এর ফলে সংস্থা বন্ধ হয়ে গেলেও সিকিউরিটি বেচে টাকা ফেরত দেওয়া হয়।

এ ছাড়াও রয়েছে আনসিকিওরড বন্ড (Unsecured Bond)। এই বন্ডে সিকিওরড বন্ডের তুলনায় ঝুঁকি বেশি। অর্থাৎ কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলে আপনি টাকা পাবেন কি না তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।

আরও রয়েছে কিউমুলেটিভ ইন্টারেস্ট (Cumulative Interest), নন কিউমুলেটিভ ইন্টারেস্ট (Non-Cumulative Interest), রিডিমেবেল (Redeemable Interest) এবং পারপেচুয়াল ইন্টারেস্ট (Perpetual Interest)। কিউমুলেটিভ ইন্টারেস্টের ক্ষেত্রে প্রকল্প শেষে মূল টাকা এবং সুদ একসঙ্গে ফেরত পাওয়া যায়। কিন্তু নন কিউমুলেটিভ ইন্টারেস্টের ক্ষেত্রে প্রতি বছর সুদ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে রিডিমেবেলে ম্যাচুরিটির তারিখ উল্লেখ থাকে এবং ফেস ভ্যালু যত আছে সেটাই ফেরত দেওয়া হয়। কিন্তু পারপেচুয়াল ইন্টারেস্টে ম্যাচুরিটির তারিখ উল্লেখ থাকে না। ভারতে এই ধরনের বন্ডের অনুমতি নেই।

এর পাশাপাশি বন্ড ইস্যুকারীদেরও প্রকারান্তর রয়েছে। ভারতে বন্ড ইস্যুকারীরা হল সরকারি বন্ড (Government Bond), কর্পোরেট বন্ড (Corporate Bond), পিএসইউ বন্ড (PSU Bond)। পিএসইউ বন্ডের মধ্যে রয়েছে পিএসইউ ট্যাক্সেবেল বন্ড, পিএসইউ ট্যাক্স ফ্রি বন্ড এবং ধারা ৫৪ ইসি।

বিনিয়োগে ঝুঁকি কেমন

সরকারি বন্ড সাধারণত ক্রেডিট শূন্য হয়। কিন্তু কর্পোরেট বন্ডে প্রথম থেকেই উচ্চমাত্রায় ঝুঁকি থাকে। পিএসইউ বন্ডের ক্ষেত্রে ঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে ধারা ৫৪ইসি (54 EC) এর ক্ষেত্রে বসবাসকারী কিংবা বসবাস করা হচ্ছে না— এমন যে কোনও সম্পত্তি বিক্রি করে যদি লাভ ৫০ লাখ টাকার কম হয়, তা হলে কোনও রকম কর দিতে হয় না। এই বন্ডে টাকা রাখার পর যে সুদ পাওয়া যায়, তার উপর কিন্তু কর দিতে হবে।

কী ভাবে বিনিয়োগ

কোনও বিনিয়োগকারী বন্ডে দু’রকম ভাবে বিনিয়োগ করতে পারেন। একটি পরোক্ষ ভাবে। অর্থাৎ বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন মিউচুয়াল ফান্ডের (Mutual Fund) মাধ্যমে। মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ডেট মিউচুয়াল ফান্ড বিভিন্ন ধরনের বন্ডে বিনিয়োগ করে। এই বিনিয়োগের সুবিধা হল এখানে বিনিয়োগের জন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। আবার এই বিনিয়োগে রিসার্চ করারও প্রয়োজন হয় না। তবে একটি অসুবিধাও রয়েছে। এই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রয়েছে ফান্ড পরিচালনার খরচ।

এ ছাড়াও আপনি বন্ডে সরাসরি বিনিয়োগ করতে পারেন। কর্পোরেট বন্ডে বিনিয়োগ করতে চাইলে তা কিনতে পারেন ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। এ ছাড়াও কমার্শিয়াল বন্ড ব্যাঙ্ক মারফত বা সংশ্লিষ্ট সংস্থার ওয়েবসাইটে গিয়ে কেনা যায়। আপনার কেনা বন্ডটি আপনার ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে দেখতে পাবেন।

সরকারি বন্ডে যদি বিনিয়োগ করতে চান তা হলে সরাসরি বিভিন্ন ব্যাঙ্কের দ্বারা বিনিয়োগ করতে পারবেন। সরকারি বন্ডে সুদের হার সাত থেকে আট শতাংশের মধ্যে থাকে। মনে রাখবেন, সরকারি বন্ড অনলাইনে কেনা যায় না। অর্থাৎ স্টক মার্কেটে কেনাবেচা হয় না।

আরও পড়ুন: দেশে থেকে বিনিয়োগ করুন আমেরিকার শেয়ার বাজারে, জেনে নিন পদ্ধতি

বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখেন ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিকরা। সমস্ত তথ্য যাচাই করে তবে বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.