চাহিদা বাড়িয়ে অর্থনীতিকে (Indian Economy) চাঙ্গা করতে আসন্ন বাজেটে ব্যক্তিগত আয়কর (Income Tax) কমানোর সুপারিশ করল বণিকসভা এবং নাগরিক সংগঠনের একাংশ।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের (Nirmala Sitaraman) কাছে তাদের আর্জি, সাধারণ মানুষের হাতে খরচ করার মতো বাড়তি টাকা থাকার বন্দোবস্ত করা জরুরি। না হলে তাঁরা প্রয়োজনের বাইরে কেনাকাটা করবেন না। চাহিদাও ছন্দে ফিরবে না। সুপারিশে আরও বেশি মানুষকে করের আওতায় আনতে আদায়ের প্রক্রিয়া আরও সহজ করার দাবিও জানানো হয়েছে। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, বকেয়া কর সংক্রান্ত পুরনো বিবাদ মেটাতে কর মকুবের জন্য মার্জনা প্রকল্প চালু করা হোক। এই সমস্ত দাবি-দাওয়া সম্বলিত প্রাক-বাজেট স্মারকলিপি নির্মলার কাছে পেশ করেছে তারা।
কী দাবি
বণিকসভা ইন্ডিয়ান চেম্বার (আইসিসি) (Bengal Indian Chamber), সিআইআই (CII) এবং নাগরিক সংগঠন ক্যালকাটা সিটিজ়েন্স ইনিশিয়েটিভ (সিসিআই) (CCI) — সব পক্ষেরই দাবি, সাধারণ করদাতার বোঝা হালকা করা অত্যন্ত জরুরি। আইসিসি-র ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব সিংহ এবং সিসিআইয়ের সভাপতি আয়কর বিশেষজ্ঞ নারায়ণ জৈন বলেন, সারচার্জ এবং শিক্ষা সেস যোগ করে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত আয়করের হার এই মুহূর্তে ৪২.৭৪%। যেখানে সংস্থাগুলির জন্য ধার্য স্বাভাবিক কর্পোরেট করের হার ২৫.১৭%। তাঁদের দাবি, ব্যক্তিগত আয়কর এবং কর্পোরেট করের ওই ফারাক কমিয়ে আনা প্রয়োজন।
জৈন বলেন, ‘‘আমরা চাই ব্যক্তিগত আয়করের সর্বোচ্চ হার (সারচার্জ, শিক্ষা সেস সমেত) ২৫% হোক। তুলনায় কম করযোগ্য আয়ের মানুষও যেন সুরাহা পান। আমাদের সংগঠন অর্থমন্ত্রীর কাছে সেই সুপারিশ করেছে। না হলে সাধারণ মানুষের হাতে টাকা থাকবে কী করে! শুধু প্রয়োজনের কেনাকাটা করলে তো চাহিদা বাড়বে না। অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে না।’’
আইসিসি স্মারকলিপিতে তাঁদের যুক্তির স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেছে অন্যান্য কিছু দেশে আয়করের হার। যেমন, হংকঙে সর্বোচ্চ আয়কর ১৫%, শ্রীলঙ্কায় ১৮%, বাংলাদেশে ২৫%, সিঙ্গাপুরে ২২%। সেই সঙ্গে বলেছে, সাধারণ মানুষের হাতে অর্থের জোগান বাড়াতে বিশেষত নীচের স্তরে আয়করের হার ঢেলে সাজানো জরুরি।
সিসিআই, আইসিসির প্রস্তাব
সিসিআই-এর (CCI) প্রস্তাব, ২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে করের হার আগের মতোই থাক শূন্য। ২.৫ লক্ষের বেশি থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর ৫% থেকে কমিয়ে ৩% করা হোক। ৫ লক্ষের বেশি থেকে ১০ লক্ষ টাকায় তা ২০% থেকে কমে হোক ১০%, ১০ লক্ষের বেশি থেকে ২০ লক্ষ টাকাতেও ১০% এবং সর্বোচ্চ ক্ষেত্রে, অর্থাৎ ২০ লক্ষ টাকার বেশি আয়ে ২৫% হোক। জৈন জানান, দেখা গিয়েছে করের হার কম হলে মোট আদায় বাড়ে।
স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের (Standard Deduction) ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে আইসিসি। পাশাপাশি তারা করছাড় পেতে আয়কর আইনের ৮০সি ধারায় বিভিন্ন জমা প্রকল্পে রাখা অর্থের ঊর্ধ্বসীমা ১.৫ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লক্ষ করার প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের যুক্তি, জমা এবং লগ্নির ক্ষেত্রে উৎসাহ দানের জন্য এটা জরুরি।
বণিক মহল কর্পোরেট সংস্থার সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্পে খরচের উপরে কর ছাড়েরও আর্জি জানিয়েছে। তাদের দাবি, এত আখেরে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষ উপকৃত হবেন। গ্রামাঞ্চলের পরিকাঠামো, শিক্ষা ব্যবস্থা, কাজ-কারবারেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আরও পড়ুন: কেওয়াইসি আপডেট নিয়ে ব্যাঙ্কগুলিকে ফের একগুচ্ছ পরামর্শ দিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক