চিনে নতুন করে করোনা আতঙ্ক। ভারতের শেয়ারবাজারে ব্যাপক পতন। গত এক সপ্তাহে, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীরা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। মাত্র ৭ দিনের মধ্যে খোয়া গিয়েছে বিনিয়োগকারীদের ১৯ লক্ষ কোটি টাকা। শুধুমাত্র শুক্রবারের কথা বললে, ৮.২৬ লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন তাঁরা।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, জাপান-সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে কোভিড সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধি এবং মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের আক্রমণাত্মক হার বৃদ্ধির কারণে এই পতন ঘটেছে।
বাজারের মতিগতি
শুক্রবার ৩০ স্টকের বিএসই সেনসেক্স (BSE Sensex) দিনের শেষে ৯৮০.৯৩ পয়েন্ট বা ১.৬১ শতাংশ পড়ে বন্ধ হয়েছে ৫৯,৮৪৫-এ। অন্য দিকে ৫০ স্টকের নিফটি ফিফটি (Nifty50) দিনের শেষে ৩২০.৫৫ পয়েন্ট বা ১.৭৭ শতাংশ পড়ে বন্ধ হয়েছে ১৭,৮০৬-এ। উল্লেখযোগ্য ভাবে দুই সূচকে সাপ্তাহিক পতন ২.৪ শতাংশেরও বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, ১৬ সেপ্টেম্বরের পর থেকে এই প্রথম এত বড় পতন হল সেনসেক্সে। অন্য দিকে, ২৩ সেপ্টেম্বরের পর এত বড় পতন দেখল নিফটি।
নিফটি-র ৫০টি স্টকের মধ্যে ৪৭টি-ই বড়সড় পতন দেখেছে শুক্রবার। শেয়ার প্রতি ৭৯৪ টাকায় বন্ধ হয়ে আদানি পোর্টস ৭ শতাংশ কমেছে। আদানি গ্রুপের আদানি এন্টারপ্রাইজের প্রতি শেয়ার 5.85 শতাংশ কমে ৩,৬৪২ টাকায় বন্ধ হয়েছে। একইভাবে, টাটা মোটরস, টাটা স্টিল এবং হিন্দালকো-সহ অন্যান্য স্টকগুলিও শুক্রবার ৪.৫ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশের মতো কমেছে।
গত সপ্তাহে শুক্রবারই সবচেয়ে বড় পতনের মুখোমুখি হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীরা একদিনে ৮.২৬ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বিএসই তালিকাভুক্ত সমস্ত কোম্পানির বাজার মূলধনও হ্রাস পেয়েছে। ২২ ডিসেম্বর যা ছিল ২৮০.৫৫ লক্ষ কোটি টাকা, ২৩ ডিসেম্বর সেটাই কমে ২৭২.২৯ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
শুক্রবার, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় বাজারে ৭০৬.৮৪ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন। যেখানে দেশীয় বিনিয়োগকারীরা ৩,৩৯৯ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছেন। অর্থাৎ, বাজারে খুচরো বিনিয়োগকারীরা সমস্ত সেক্টরে শেয়ার বিক্রি করেছেন, বিশেষ করে স্মল-ক্যাপ এবং মিড-ক্যাপে। অন্য দিকে, ভারতীয় মুদ্রা রুপি মার্কিন ডলারের বিপরীতে ১০ পয়সা কমে ৮২.৮৬-তে এসে ঠেকেছে।
বিপর্যয়ের নেপথ্যে অন্যতম কারণ
সবচেয়ে বেশি পতনের মুখোমুখি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। নিফটিতে ত্রৈমাসিক পতন প্রায় ৬.০৬ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি পড়েছে ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক (১৪.৮২ শতাংশ)। অন্য দিকে ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের ত্রৈমাসিক পতন ১০.৫৭ শতাংশ। মেটাল এবং মিডিয়া সূচকের পতন যথাক্রমে ৪.৭৭ শতাংশ এবং ৪.৯৯ শতাংশ। ধারণা করা হচ্ছে, চিনে ক্রমবর্ধমান করোনা উদ্বেগের কারণে মেটাল স্টক চওড়া পতনের মুখোমুখি হচ্ছে।
কোভিড নিয়ে ইতিমধ্যেই সারা বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়েছে ফের। চিন, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিল-সহ বেশ কিছু দেশে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। সেই উদ্বেগেই এ সপ্তাহের টানা চার দিন নিম্নমুখী শেয়ার বাজারের সূচকগুলি। শুধু ঘরোয়া বাজার নয়, গত কয়েক দিন থেকে লাগাতার পতন জারি রয়েছে বিশ্বের অন্য দেশের শেয়ার সূচকগুলিতেও।
একই সঙ্গে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক তথ্য। আমেরিকার সাপ্তাহিক এমপ্লয়মেন্ট ডেটা এখনও শক্তিশালী শ্রমবাজারের দিকে ইঙ্গিত করছে। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে যে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির অনুমান করা হয়েছিল, বাস্তবে তা দ্রুত প্রত্যাবর্তন করছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা, এমন পরিস্থিতিতে লক্ষ্যমাত্রার হার বাড়িয়ে দিতে পারে ফেডারেল রিজার্ভ।
আরও পড়ুন: এক কেওয়াইসিতে যে কোনও ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে, শীঘ্রই নয়া ব্যবস্থা চালু হচ্ছে রাজ্যে