সয়াবিনের দামে ব্যাপক পতন, চিন্তিত কৃষকরা

soyabean

বিবি ডেস্ক: কৃষিকাজে কৃষকদের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে খরা, বন্যা অথবা অতিরিক্ত বৃষ্টি। এই খরিফ মরশুমেও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় নষ্ট হয়েছে কোটি কোটি টাকার ফসল। কৃষকদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারগুলি। তাতে হতাশা কাটলেও সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষতিপূরণ হওয়ার নয়। এ বার চিন্তিত সয়াবিন উৎপাদনকারী কৃষকরা। তাঁদের দুশ্চিন্তার পিছনে কারণ হল সয়াবিনের দামে (Soybean prices) ব্যাপক পতন।

সয়াবিনের দামে কতটা পতন

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাড়ি হোক বা হোটেল, ভারতে সয়াবিনের চাহিদা যথেষ্ট। কারণ, সয়াবিন একটি পুষ্টিকর খাবার। বিভিন্ন পদে ব্যবহারের সুবিধা থাকায় মানুষ এটা খেতে ভালোবাসে। যে কারণে ভালো দামে বিক্রিও হয়। বাজারের চাহিদার কথা মাথায় রেখে কৃষকরা সয়াবিন উৎপাদনে যথেষ্ট আগ্রহ দেখান। সয়াবিন প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার অনুমান, চলতি বছরের খরিফ মরশুমে সয়াবিন উৎপাদনের আনুমানিক পরিমাণ ১২.০৩ মিলিয়ন টন, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১১.৮ মিলিয়ন টন।

কিন্তু অন্য বছরের তুলনায় এ বার এর দামে সবচেয়ে বেশি পতন দেখা দিয়েছে। যা সচরাচর ঘটে না।মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রের মন্ডিতে সয়াবিনের দাম ৯০০ টাকা কমেছে। বর্তমানে নন্দুরবার বাজার সয়াবিন প্রতি কুইন্টাল ৪৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু একসময় এর দাম ছিল কুইন্টাল প্রতি ৫৪০০ টাকা। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই পতন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

সয়াবিন বিক্রি থেকে সরছেন কৃষকরা!

হঠাৎ করে সয়াবিনের দাম কমার প্রভাব বাজারে স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে। বাজারে আর আগের মতো সয়াবিন আসছে না। মিডিয়া রিপোর্ট বলছে, নন্দুরবার জেলায় প্রায় ২৫৩২৬ হেক্টর এলাকায় সয়াবিন চাষ হয়। কিন্তু এই বিশাল আয়তনের জমিতে সয়াবিন চাষ হলেও সেই তুলনায় ফসল আসছে না বাজারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষকদের মন খারাপ। এত কম দামে সয়াবিন বিক্রি করতে রাজি নন তাঁরা। এতে উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে ব্যবধান লম্বা হচ্ছে। ফলে এখন সয়াবিন বিক্রি করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশের মালওয়া অঞ্চলের নিপানিয়া বৈজনাথ গ্রামের কৃষকরা ফসল ঘরে তুলেছেন প্রায় দু’মাস আগে। কিন্তু দাম বাড়ার আশায় ফসলের একটা বড়ো অংশ এখনও ধরে রেখেছেন।

সয়াবিনের দামে হেরফের

মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী,ঔরঙ্গাবাদের মন্ডিতে সর্বনিম্ন দাম ছিল প্রতি কুইন্টাল ৪৯৩০ টাকা, সর্বোচ্চ ৫৩০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল, অর্থাৎ গড় দাম ৫১৭০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। অহমদনগর মান্ডিতে সর্বনিম্ন দাম ছিল ৪৭০১ টাকা প্রতি কুইন্টাল এবং সর্বোচ্চ ৫২৯৬ টাকা প্রতি কুইন্টাল। গড় দাম ছিল কুইন্টাল প্রতি ৫০৪৩ টাকা। বীডের বাজারে সর্বনিম্ন দাম ছিল প্রতি কুইন্টাল ৪৭৭৫ টাকা, সর্বোচ্চ দর ছিল ৫৩৯২ টাকা প্রতি কুইন্টাল, গড় ছিল ৫২০৫ টাকা প্রতি কুইন্টাল। ভান্ডারার মন্ডিতে সর্বনিম্ন দাম ছিল প্রতি কুইন্টাল ৪৭০০ টাকা, সর্বোচ্চ ৪৭০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। ফলে গড় দাম ছিল ৪৭০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল।

জানা গিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের একটা অংশের সয়াবিন চাষি দাম বাড়ার প্রত্যাশায় রয়েছেন। সয়াবিনের দাম নিয়ে এক কৃষকের মন্তব্য, “ভবিষ্যতে সয়াবিনের চুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় আগামী ২-৩ মাসে সয়াবিনের দাম কী হবে তা আমি জানি না”। অন্য দিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সয়াবিনের উৎপাদন খরচ বিবেচনা করলে বর্তমানের দাম খুবই কম।

আরও পড়ুন: বেড়েই চলেছে লোকসান, এ বার অর্থ মন্ত্রকের কাছে বিপুল ক্ষতিপূরণ চাইল তেল মন্ত্রক

বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখেন ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিকরা। সমস্ত তথ্য যাচাই করে তবে বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.