সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা নিয়ে বিশ্ববাজারে উদ্বেগ বাড়ছে। প্রশ্ন উঠেছে, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি কি সত্যি, নাকি এটি নিছক কৌশল?
ট্রাম্প ১০% শুল্ক বসানোর কথা বলেছেন চিনের আমদানির উপর, ২৫% শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন মেক্সিকো, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) বিরুদ্ধে। এমনকি ভারতসহ ব্রিকস (BRICS) দেশগুলোর উপর ১০০% শুল্ক বসানোর কথাও বলেছেন।
৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প জানিয়েছেন, ক্ষমতায় ফিরেই তিনি এই শুল্ক কার্যকর করবেন। তবে এখন পর্যন্ত তা হয়নি। যদিও তিনি বলেছেন, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুল্ক কার্যকর হতে পারে, তবে দেরি হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন— ট্রাম্প কি সত্যিই ঝুঁকি নেবেন, নাকি এটি শুধু কৌশল?
ফাঁকা আওয়াজ নয় তো?
বিশ্ব অর্থনীতিবিদদের মতে, ট্রাম্প “ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ” মুডে রয়েছেন এবং তিনি বাণিজ্যের পাশাপাশি অভিবাসনসহ অন্যান্য ইস্যুতে সুবিধা আদায়ের জন্য লেনদেনমূলক (transactional) নীতি নিচ্ছেন।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট বোর্জ ব্রেন্ডে বলেছেন, ট্রাম্প আসলে একজন “ডিলমেকার” এবং শুল্ক হুমকিকে একটি লিভারেজ হিসেবে ব্যবহার করছেন।
হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোও সম্প্রতি বলেছেন, ট্রাম্পের কানাডা ও মেক্সিকোর বিরুদ্ধে শুল্ক হুমকির উদ্দেশ্য মূলত অবৈধ অভিবাসন ও মাদক পাচার বন্ধ করা।
ট্রাম্পের অনিশ্চয়তা
তবে অর্থনীতিবিদরা এখনও নিশ্চিত নন যে ট্রাম্প সত্যিই ফাঁকা আওয়াজ দিচ্ছেন কিনা, কারণ তাঁর সিদ্ধান্ত সবসময়ই অনিশ্চিত।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ট্রাম্প একবার বলেছিলেন, “ট্যারিফ (শুল্ক) শব্দটি ইংরেজি অভিধানের সবচেয়ে সুন্দর শব্দ”— যা বিশ্ববাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল।
শুল্কের প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে ট্রাম্পের পরিকল্পিত শুল্ক একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য যুদ্ধের রূপ নিতে পারে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে।
তার প্রথম দফার শাসনকালে চীনের সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধ বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছিল। এবার বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার মুখোমুখি থাকায় প্রভাব আরও ভয়াবহ হতে পারে।
শুল্ক যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে, স্টক মার্কেট ধাক্কা খেতে পারে এবং বিভিন্ন দেশে মন্দা দেখা দিতে পারে। তাই ট্রাম্প প্রশাসন এখনই কোনো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে সতর্কতা অবলম্বন করছে।
ভারতের জন্য কী ঝুঁকি রয়েছে?
বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির সরাসরি প্রভাব ভারতের ওপর পড়বে না।
বিশ্লেষক ক্রান্তি বাথিনি বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে উভয় পক্ষই সুবিধাজনক চুক্তির দিকে নজর দেয়। ট্রাম্প মূলত চীন, ব্রাজিল ও কানাডার মতো দেশগুলিকে টার্গেট করছেন, যাদের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।
ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য তুলনামূলকভাবে কম, তাই ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রভাব ভারতের ওপর সীমিত থাকবে।