২০২২ সালের জানুয়ারিতে যখন টাটা গোষ্ঠী এয়ার ইন্ডিয়া ও এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন এই স্বল্প-মূল্যের বিমান সংস্থার বহরে মাত্র ২৬টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০এনজি বিমান ছিল। কিন্তু বর্তমানে টাটার মালিকানায় এটি দ্রুত সম্প্রসারিত হয়ে ১০০ বিমানের গণ্ডি পেরিয়ে গেছে। ভারতের মধ্যে ইন্ডিগো ও এয়ার ইন্ডিয়ার পর এটি তৃতীয় বিমান সংস্থা, যার বহর তিন অঙ্কের সংখ্যায় পৌঁছেছে। এই বৃদ্ধির ফলে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস এখন অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল বিমান সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
২৬ থেকে ১০০ বিমানের যাত্রা
টাটার হাতে আসার সময় এটি ছিল সম্পূর্ণ বোয়িং বিমান সংস্থা। বর্তমানে এটি এয়ারবাস ও বোয়িং—দুই ধরনের বিমান পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ২৫টি এ৩২০সিইও, ১৩টি এ৩২০নিও, ২৬টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এবং ৩৮টি বোয়িং ম্যাক্স ৮ বিমান রয়েছে। এর মধ্যে কিছু বিমান আগে এয়ারএশিয়া ইন্ডিয়ার ছিল, যা এখন এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের অধীনে এসেছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সংস্থাটি দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে চলেছে—প্রথমত, বিভিন্ন ধরনের কেবিন বিন্যাস থাকা বিমানের পরিবর্তে একক বিন্যাসের অর্থনীতি ক্লাস চালু করা এবং দ্বিতীয়ত, পুরনো এয়ারবাস ও বোয়িং বিমান সরিয়ে পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানিসাশ্রয়ী নতুন বিমান সংযোজন করা। এর ফলে ইন্ডিগোর মতো অন্যান্য স্বল্প-মূল্যের বিমান সংস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সুবিধা পাবে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস।
বিস্তৃত পরিসরে সম্প্রসারণ
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস তার উড়ানের সংখ্যা এবং যাত্রীদের জন্য আসন সংখ্যা ৪.৫ গুণ বৃদ্ধি করেছে। এটি এখন এয়ার ইন্ডিয়ার কিছু অভ্যন্তরীণ রুট পরিচালনা করছে এবং পুরোপুরি এয়ারএশিয়া ইন্ডিয়ার অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কের দায়িত্ব নিয়েছে। আগে শুধুমাত্র সীমিত অভ্যন্তরীণ রুটে পরিচালিত হলেও, বর্তমানে সংস্থাটি ভারত ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ৫৩টি গন্তব্যে উড়ান চালাচ্ছে, যার মধ্যে নতুন আন্তর্জাতিক গন্তব্য হিসেবে থাইল্যান্ডের ফুকেট ও ব্যাংকক যুক্ত হয়েছে।
বিভ্রান্তি ও চ্যালেঞ্জ
অতিরিক্ত দ্রুত সম্প্রসারণের কারণে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস। বর্তমানে এয়ারলাইন্সের বহরে চার ধরনের লিভারি (বাহ্যিক রঙ ও ডিজাইন) থাকা বিমান রয়েছে, যার ফলে পরিচালনা ও যাত্রী অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে কিছুটা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। বোয়িং ম্যাক্স ৮ বিমানগুলোর কিছুতে বিজনেস ক্লাসের আসন থাকলেও, কিছুতে শুধুমাত্র ইকোনমি ক্লাস রয়েছে। সেইসঙ্গে, আগের এয়ারএশিয়া ইন্ডিয়ার কিছু এয়ারবাস বিমান এখনও তাদের পুরনো লিভারিতে চলছে।
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সরকারি মালিকানায় থাকলে এই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হতো না। টাটা গোষ্ঠী তার দুই-সংস্থার কৌশলে এগোচ্ছে, যেখানে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ভারতের মেট্রো শহরের বাইরের রুটগুলিতে ইন্ডিগোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করছে এবং আন্তর্জাতিক রুটে নিজেদের বিস্তার বাড়াচ্ছে। ২০২৫ সাল হবে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের জন্য আরও ভালো একটি বছর। তাদের মূল লক্ষ্য থাকবে পরিচালনার মান উন্নত করা, নতুন সংযোগ চালু করা এবং কর্মী ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলি সফলভাবে সামলানো।