আদানি গ্রুপের শেয়ারের দামে বিশাল পতন ঘটেছে বৃহস্পতিবার। গৌতম আদানি ও আরও সাতজনের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহু-বিলিয়ন ডলারের ঘুষ ও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার মার্কিন কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেছে যে আদানি গ্রুপ নাকি ভারতের সৌরশক্তি প্রকল্প পাওয়ার জন্য কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছে। এ দিনের ঘটনা আদানি শেয়ারের দামে হিন্ডেনবার্গ কাণ্ডের (২০২৩ সালের শুরুর দিকে) পর সবচেয়ে বড় পতন।
আদানি এন্টারপ্রাইজেস, যা গ্রুপের প্রধান কোম্পানি, শেয়ারের দামে ২০% পতন দেখেছে। আদানি এনার্জি সলিউশনসের শেয়ারেও একই মাত্রার পতন হয়েছে। আদানি গ্রিন এনার্জি ১৯.১৭%, আদানি টোটাল গ্যাস ১৮.১৪%, আদানি পাওয়ার ১৭.৭৯%, এবং আদানি পোর্টস ১৫% দামের পতন দেখেছে বিএসই-তে।
এছাড়াও গ্রুপের অন্যান্য কোম্পানিগুলির মধ্যে অ্যাম্বুজা সিমেন্টস ১৪.৯৯% এবং এএসি শেয়ার ১৪.৫৪% দামে পতন ঘটেছে। এনডিটিভি শেয়ারের দাম ১৪.৩৭% কমেছে এবং আদানি উইলমারের শেয়ার ১০% কমে গেছে। ট্রেডিং সেশনের সময় বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার তাদের দৈনিক লোয়ার সার্কিটে পৌঁছায়।
আজকের শেয়ারবাজারের ২০% পতনের ফলে আদানি গ্রুপের ১১টি কোম্পানির মোট বাজারমূল্য প্রায় ২.২৫ লাখ কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ কোটিতে। ফোর্বসের রিয়েল-টাইম বিলিয়নেয়ার্স তালিকার তথ্য অনুযায়ী, গৌতম আদানির সম্পত্তি ১০.৫ বিলিয়ন ডলার কমে গিয়ে ৫৯.৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
মুডিস রেটিংস বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, এই ঘটনাগুলি আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলির ঋণমানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
মুডিসের বক্তব্য অনুযায়ী, “আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও অন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের ঘুষের অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়া গ্রুপের কোম্পানিগুলির জন্য ঋণমানের দিক থেকে নেতিবাচক। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলি তাদের তারল্যের প্রয়োজন মেটাতে পুঁজি সংগ্রহ করতে পারবে কিনা এবং তাদের শাসনব্যবস্থা কতটা কার্যকর তা নির্ধারণ করা।”
এদিকে, হিন্ডেনবার্গ ঘটনার পর আদানি গ্রুপে বড় বিনিয়োগকারী জিকিউজি-এর শেয়ার অস্ট্রেলিয়ান স্টক এক্সচেঞ্জে ২৬% কমেছে।
আদানি ঘুষ-কাণ্ড
আদানি গ্রিন এনার্জির বোর্ড সদস্য গৌতম আদানি এবং সাগর আদানির বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ ও প্রতারণার অভিযোগ এনেছে ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস এবং ইউনাইটেড স্টেটস সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। নিউইয়র্কের পূর্বাঞ্চলীয় শাখায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে অন্য আরেক বোর্ড সদস্য বিনীত জৈনের বিরুদ্ধেও।
অভিযোগ অনুযায়ী, তারা ভারত সরকারের সোলার এনার্জি চুক্তি পেতে প্রায় ২,৬৫০ লক্ষ ডলার ঘুষ দিয়েছেন। ৬২ বছর বয়সী গৌতম আদানি এবং তাঁ সংস্থার সাতজন উচ্চপদস্থ কর্তাদের বিরুদ্ধে ‘সিকিউরিটিজ ফ্রড’ এবং ‘ওয়্যার ফ্রড’-এর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালতের নথি অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভারত সরকারের সোলার এনার্জি কর্পোরেশনের (SECI) সঙ্গে ১২ গিগাওয়াট সোলার বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তি পাওয়ার জন্য এই ঘুষ দেওয়া হয়।
আমেরিকার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আদানি এবং তাঁর সহযোগীরা মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে আমেরিকার বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কয়েকশ কোটি ডলার তুলেছেন। পাশাপাশি, ভারতীয় সরকারি চুক্তি পেতে ঘুষ দিয়ে নিজেদের সংস্থার মুনাফা বাড়িয়েছেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০ বছরে প্রায় ২০০ কোটি ডলার মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা ছিল।