মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদে সম্পদ বৃদ্ধি, জরুরি তহবিল তৈরি এবং অবসর পরিকল্পনার মতো আর্থিক লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য একটি কার্যকর উপায়। তবে কিছু পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার কথা ভাবতে হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, বিনিয়োগ থেকে বেরোনোর সিদ্ধান্ত হতে হবে সুপরিকল্পিত ও সুচিন্তিত, যাতে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে না হয়।
কখন মিউচুয়াল ফান্ড থেকে বিনিয়োগ তুলে নেওয়া উচিত?
১. আর্থিক লক্ষ্য অর্জন হলে
মিউচুয়াল ফান্ড সাধারণত নির্দিষ্ট আর্থিক লক্ষ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকে, যেমন জরুরি তহবিল তৈরি, উচ্চশিক্ষার জন্য সঞ্চয় বা অবসর পরিকল্পনা। যদি বিনিয়োগ নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছে যায়, তাহলে মুনাফা সংরক্ষণের জন্য তুলে নেওয়া যেতে পারে।
২. ফান্ড দীর্ঘদিন ধরে খারাপ পারফর্ম করলে
একটি মিউচুয়াল ফান্ড যদি ধারাবাহিকভাবে খারাপ পারফর্ম করে, তবে বিনিয়োগ পুনর্বিবেচনা করা উচিত। এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে:
- অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন
- সরকারি নীতির প্রভাব
- ফান্ড ম্যানেজারের সিদ্ধান্তগত ব্যর্থতা
এমন ক্ষেত্রে ভালো পারফর্ম করা অন্য কোনো ফান্ডে বিনিয়োগ স্থানান্তর করা লাভজনক হতে পারে।
৩. পোর্টফোলিও পুনর্গঠনের প্রয়োজন হলে
বাজার ওঠানামার কারণে আপনার বিনিয়োগ কাঠামো বদলে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ইকুইটি ফান্ডের মূল্য বেশি বেড়ে গেলে ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তখন ইকুইটি থেকে কিছু অংশ তুলে ডেট ফান্ডে স্থানান্তর করা যেতে পারে, যাতে ঝুঁকি কমে এবং ভারসাম্য বজায় থাকে।
৪. ফান্ডের বিনিয়োগ লক্ষ্য বা ঝুঁকি পরিবর্তন হলে
কিছু সময়ে মিউচুয়াল ফান্ডের মূল লক্ষ্য পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন, কোনো ফান্ড যদি প্রথমে রক্ষণশীল বিনিয়োগ নীতি অনুসরণ করত, কিন্তু পরে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে মনোযোগ দেয়, যা আপনার আর্থিক লক্ষ্যের সঙ্গে মিলছে না, তবে বিনিয়োগ তুলে নেওয়া যুক্তিযুক্ত হতে পারে।
SEBI-এর ২০১৮ সালের মিউচুয়াল ফান্ড পুনর্গঠনের প্রভাব
২০১৮ সালে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর কাঠামো পুনর্গঠন করে বিনিয়োগকারীদের স্বচ্ছতা দিতে একাধিক ফান্ড একত্রিত করে সেবি (Securities and Exchange Board of India)। যদি এই পরিবর্তনের ফলে আপনার ফান্ডের নতুন নীতি আপনার আর্থিক লক্ষ্যের সঙ্গে না মেলে, তবে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা বিবেচনা করতে পারেন।
বিনিয়োগ তোলার আগে যেসব বিষয় মাথায় রাখা উচিত
- বাজারের পরিস্থিতি: শুধুমাত্র বাজারের ওঠানামার কারণে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেবেন না।
- এক্সিট লোড ও কর: বিনিয়োগে এক্সিট লোড চার্জ বা ক্যাপিটাল গেন ট্যাক্স প্রযোজ্য কি না তা যাচাই করুন।
- পুনঃবিনিয়োগ পরিকল্পনা: উত্তোলিত অর্থ কোথায় পুনঃবিনিয়োগ করবেন, তা নির্ধারণ করুন।
- জরুরি তহবিল: কিছু অংশ অর্থ হিসাবে রেখে দিন, যাতে জরুরি অবস্থায় ব্যবহার করা যায়।
সঠিক সময়ে পরিকল্পিতভাবে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করলে আপনার আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং ভবিষ্যতের লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ হবে। তবে, যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তার দরকার রয়েছে।