চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যবস্থাধীন সম্পদে (AUM) ব্যাপক হ্রাস! এই পরিমাণ ৩.৮৩ শতাংশ কমে ২৪,৮৫,৮৪৪ কোটি হয়েছে, যা ডিসেম্বর ২০২৪-এ ছিল ২৫,৮৪,৮৫১ কোটি টাকা (সেক্টরাল ও থিম্যাটিক ফান্ড বাদে)। সম্প্রতি প্রভুদাস লীলাধরের অধীনস্থ পিএ ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট ও পিএল ক্যাপিটাল তাদের সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে সেই তথ্য তুলে ধরেছে।
সংস্থা জানিয়েছে, এই গবেষণা ২৯১টি ওপেন-এন্ডেড ইকুইটি ডাইভারসিফায়েড ফান্ডের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। যেখানে দেখা গেছে, জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত মাত্র ২৬.১২ শতাংশ ফান্ড তাদের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চমার্ককে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছে। মোট ৭৬টি ফান্ড ওই সময় বেঞ্চমার্ককে অতিক্রম করেছে।
স্মল ক্যাপ ফান্ডের শীর্ষস্থানীয় পারফরম্যান্স
বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড ক্যাটাগরির মধ্যে স্মল ক্যাপ ফান্ড সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স করেছে, যেখানে ৮৬.২১ শতাংশ স্কিম তাদের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চমার্ককে ছাড়িয়ে গেছে। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধির ফলে এই খাতে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যদিও বাজারের অস্থিরতা বজায় ছিল।
ইকুইটি লিংকড সেভিংস স্কিম (ELSS) ও ফোকাসড ফান্ডও ভালো ফলাফল দেখিয়েছে। যেখানে যথাক্রমে ৩১.৭১ শতাংশ ও ২৮.৫৭ শতাংশ স্কিম বেঞ্চমার্ককে অতিক্রম করেছে। কর সাশ্রয়ের উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত ত্রৈমাসিকে ইএলএসএস-এ বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভ্যালু কন্ট্রা ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড ফান্ডের ২৭.২৭ শতাংশ ও ফ্লেক্সি ক্যাপ ফান্ডের ২৩.০৮ শতাংশ বেঞ্চমার্কের তুলনায় ভালো পারফর্ম করেছে।
লার্জ ক্যাপ ফান্ডের দুর্বল পারফরম্যান্স
অন্যদিকে, লার্জ ক্যাপ ফান্ডগুলোর পারফরম্যান্স সন্তোষজনক ছিল না। এই ক্যাটাগরির কোনো স্কিমই বেঞ্চমার্ককে অতিক্রম করতে পারেনি। বাজারের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ব্লু-চিপ স্টকগুলো ভালো করতে না পারায় এই খাতে প্রবৃদ্ধি সীমিত হয়েছে।
জানুয়ারি ২০২৫-এ মাত্র ১০.৩৪ শতাংশ মাল্টি ক্যাপ ফান্ড ও ১২.৯০ শতাংশ লার্জ অ্যান্ড মিড ক্যাপ ফান্ড বেঞ্চমার্ককে অতিক্রম করেছে।
জানুয়ারিতে মিউচুয়াল ফান্ডের তথ্য
জানুয়ারিতে ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে নিট প্রবাহ ৩.৬ শতাংশ কমে ৩৯,৬৮৭ কোটি হয়েছে, যা ডিসেম্বরে ৪১,১৫৫ কোটি ছিল। তবে, ওপেন-এন্ডেড ইকুইটি ফান্ডে ৪৭ মাস ধরে অব্যাহত বিনিয়োগের ধারা বজায় থাকায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা দৃঢ় রয়েছে।
জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত মোট মিউচুয়াল ফান্ড ফোলিওর সংখ্যা ২২,৯১,৯৯,৩৭৭ টাকায় পৌঁছেছে। খুচরো বিনিয়োগকারীদের ফোলিও, যেখানে ইকুইটি, হাইব্রিড ও সলিউশন-ওরিয়েন্টেড স্কিম অন্তর্ভুক্ত। ডিসেম্বরের ১৭,৮৯,৯৩,৯১১ টাকা থেকে জানুয়ারিতে যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৮,২২,২৩,০৭৮ টাকা।
সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (SIP)-এ অবদান ২৬,০০০ কোটির গণ্ডি অতিক্রম করেছে। জানুয়ারিতে মোট এসআইপি প্রবাহের পরিমাণ ২৬,৪০০ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ২৬,৪৫৯ কোটি।
প্রবাহ হ্রাসের মূল কারণ ফ্লেক্সি ক্যাপ ও লার্জ ক্যাপ ফান্ডের বিনিয়োগে পতন। ফ্লেক্সি ক্যাপ ফান্ডে ডিসেম্বরে ৫,৬৯৭ কোটি বিনিয়োগ হলেও জানুয়ারিতে তা কমে ৪,৭৩০ কোটিতে নেমে এসেছে। লার্জ ক্যাপ ফান্ডে এই সময়কালে বিনিয়োগ ৩,০৬৩ কোটি থেকে কমে ২,০১০ কোটি হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের পছন্দের পরিবর্তন নির্দেশ করে।
বাজারের দৃষ্টিভঙ্গি
গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারীদের জন্য মিশ্র চিত্র উঠে এসেছে। স্মল ক্যাপ ও কিছু ডাইভারসিফায়েড ফান্ড ভালো পারফর্ম করেছে, তবে লার্জ ক্যাপ ফান্ড পিছিয়ে পড়েছে। বলে রাখা ভালো, বাজারের অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে ফান্ড ম্যানেজাররা স্টক নির্বাচন ও সেক্টর বণ্টনের মাধ্যমে বিনিয়োগের কৌশল নির্ধারণ করতে পারেন।