বাজারে মন্দা! তাই বলে কি সঞ্চয় থেকে হাত গোটাতে হবে?

Currency
Arunava-Gupta

এ তুফান ভারি, দিতে হবে পাড়ি… আয়ের পৃথক উৎস না থাকলেও কী ভাবে সঞ্চয় করছেন গৃহবধূরা? মুম্বই থেকে লিখছেন অরুণাভ গুপ্ত

চাহ্নবী চতুর্বেদী-কুমুমলতা প্রসাদ-শিউলি নাদার, গড় বয়স বাহান্নোর আশেপাশে। থাকেন থানের একই কমপ্লেক্সে। হরিহর আত্মা বন্ধুত্ব, যা করেন এক সঙ্গে, এক প্ল্যানে।

আলাপের সময় আমি নিশ্চিত, জাহ্নবী রিংলিডার এবং তিনজনেই নির্ভেজাল গৃহবধূ, চাকরি-বাকরির বালাই নেই। এমনকী, টুকটাক সাইড বিজনেসেরও ধারেপাশে নেই। তবুও খানিকটা সংশয় নিয়ে জমানোর ব্যাপারে প্রশ্ন করতে জাহ্নবী বলে ওঠেন, “দাদার ধারণা, আমরা খাইদাই ভ্যারান্ডা বাজাই। আজ্ঞে না, আমরা আমাদের মতো সঞ্চয় করি। জানেন না, মেয়েরা জাত সঞ্চয়ী”?

হাঁফ ছাড়লাম। খালি হাতে ফিরতে হবে না।

শিউলি গড়গড়িয়ে বলতে থাকেন, “আমার আয় বলতে দু’টো রাস্তা। মাস পয়লা সংসারের খরচ থেকে খানিকটা বাঁচিয়ে সরিয়ে রাখি, আর স্বামীর পকেট? বড়োসড়ো না হলেও যা আসে, সেটা বুদ্ধি করে খাটাই। যেমন অল্প টাকায় রেকারিং ডিপোজিট করাই, ম্যাচিউরড হলে সেটাকে রিনিউ করি। মানে, আবার সুদ শুদ্ধু পুরোটা। কোনো সেভিংসে রাখারাখি নেই, ওটা কর্তার মাথাব্যথা। বাকি কুড়িয়ে-বাড়িয়ে পাঁচশো-হাজার সুদে খাটাই। পাড়ায় সবজি বিক্রি করে যারা, তাদের সঙ্গে ভালো জান-পয়চান আছে। ওরা দু’শো-তিনশো নেয়, পরের দিন ফেরত দিয়ে দেয়। সুদ সমেত আবার নেয়। আমার ক্লায়েন্ট জনা পাঁচেক, সবাইকে দিই না, ঝুঁকি থাকে। আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে হাতেগোনা দু’-এক পিস আছে”।

কুসুমলতা রেকারিংয়ের সঙ্গে শেয়ার কেনাবেচা করেন। জানালেন, “ওঁর বাপেরবাড়ির এক নিকটাত্মীয় শেয়ার বাজার গুলে খেয়েছে। তাঁর বুদ্ধিতেই কোন কোম্পানির শেয়ার কিনতে হবে, আর কোনটা ছাড়তে হবে, সেই বুঝে কেনাবেচা করি। সেই-ই সমস্ত ক্যালকুলেশন করে। আমি বিশ্বাস করি, সকলের কাছেই মোটা পুঁজি থাকবে, তার কোনো মানে নেই। খালি হাতেই জমানো শুরু করা যায়। তবে মগজ খেলাতে হবে। আমি তো ওই ৫০-৩০-২০ নিয়ম আদাজল খেয়ে পালন করি। বুঝলেন কিছু? মোদ্দা হল, যেখান থেকে যেমন আয় হবে, তার ৫০-৩০ না হোক, অন্তত ২০ রাখতেই হবে। কথায় বলে, মানি ব্রিঙ্গস মানি”!

শিউলি কিছু বলার আগেই জাহ্নবী বললেন, “তুই তো স্বামীর কাছ থেকে হাতখরচ পাস, ফটাফট মগডালে উঠছিস”।

লাজুক হাসেন শিউলি। – “অত নয়… চোখ পাকাস না কুসুম তফাত সামান্য। দাদা খোলাখুলি বলছি, জমানোর বেলায় উড়নচণ্ডী না হলেও খরুচে। জম্পেশ খেতে পেলে আমার দিলখুশ। তবে হাউস ওয়াইফদের খানিকটা পায়ের তলার মাটি শক্ত থাকা দরকার। পুরোটা স্বামী-নির্ভরতা ভালো নয়। যদিও আমরা হাউস ওয়াইফরা প্রায়-ই তাই। যা কিছু করছি, পুরোটাই তাঁর ধনে পোদ্দারি। আমি ওদের মতোই রেকারিং করেছি, আর রয়েছে মানি ব্যাক পলিসি। ধাপে ধাপে যেটা মিলছে সেটা দেরি না করে স্বল্পমেয়াদিতে লাগাচ্ছি। মানে কোনো না কোনো খাতে ইনভেস্ট করছি”।

“আর ওটা বললি না”? জাহ্নবী খোঁচালেন।

শিউলি ফের বলেন, “মায়ের একটা স্বভাব পেয়েছি। আমার দু’টো বড়ো বড়ো জালা রয়েছে। ওগুলোর একটাতে পাঁচ আরেকটাতে নিয়ম করে দশ টাকার কয়েন ফেলি। অনেকে হাসে, বয়ে গেছে। এটা যে দুর্দিনে কত বড়ো বন্ধু, তা মা-কে দেখে বুঝেছি”।

[ বাংলাBIZ-এর আরও লাইফস্টাইলের প্রতিবেদন পড়ুন এখানে ক্লিক করে ]

এখন আবার নতুন করে প্রশ্ন উঠছে, এই সঞ্চয় এবং খরচ না করার অনীহা থেকেই কি বাজারের মন্দা? জনগণকে দুষে লাভ নেই, তাঁরা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছেন- ভাত দেওয়ার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই। তা ছাড়া যাবতীয় প্ল্যানপ্রোগ্রাম তো রাজনীতির কারবারিদেরই মস্তিষ্কপ্রসূত, তা হলে আর ‘গেল গেল’ রব কেন?

বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখেন ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিকরা। সমস্ত তথ্য যাচাই করে তবে বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.