আয়কর আইনের এই ৫টি ধারা জানা থাকলে সাশ্রয় অবধারিত!

নতুন আর্থিক বছর ২০২৫-২৬ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এই সময়ে করদাতাদের জন্য আয়কর আইন, ১৯৬১-এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। এই ধারাগুলি সম্পর্কে জেনে রাখলে কর পরিকল্পনা ও সঠিকভাবে রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে দারুণভাবে কাজে লাগে।

এখানে এমন পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ আয়কর ধারা আলোচনা করা হল, যেগুলি প্রত্যেক ভারতীয় করদাতার জানা উচিত:

ধারা ৮০সি: সবচেয়ে জনপ্রিয় কর-সাশ্রয়কারী ধারা

এই ধারায় প্রতি বছর ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়, যদি কেউ নির্দিষ্ট কিছু আর্থিক প্রকল্পে বিনিয়োগ করেন। যেমন: পিপিএফ, ইপিএফ, ইএলএসএস, ৫ বছরের ট্যাক্স সেভিং এফডি, সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা ও জীবনবিমা প্রিমিয়াম। এছাড়াও, সন্তানের স্কুল ফি এবং গৃহঋণের মূল টাকা ফেরতের অংশও এই ছাড়ের অন্তর্গত। তবে, ১.৫ লক্ষ টাকা ছাড় মোট বিনিয়োগে মিলবে, আলাদা আলাদা নয়।

ধারা ২৪(বি): গৃহঋণের সুদের উপর ছাড়

নিজের ব্যবহারের জন্য নেওয়া গৃহঋণে বার্ষিক ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুদের ছাড় পাওয়া যায়। যদি বাড়িটি ভাড়ায় দেওয়া হয়, তাহলে পুরো সুদের অর্থ দাবি করা যায়, যদিও অন্য আয় থেকে সেট-অফ সর্বাধিক ২ লক্ষ পর্যন্তই অনুমোদিত। নির্মাণ কাজ শেষ হতে হবে ঋণ নেওয়ার অর্থবছরের শেষ দিনের পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে। এই ধারা অনুযায়ী সুবিধা নেওয়ার আগে একজন অভিজ্ঞ কর পরামর্শদাতার সঙ্গে আলোচনা করা বাঞ্ছনীয়।

ধারা ৮০ডি: স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়ামে কর ছাড়

এই ধারায় নিজের, জীবনসঙ্গী এবং সন্তানের জন্য নেওয়া স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়ামে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। যদি অভিভাবকরা ষাটোর্ধ্ব হন, তবে তাঁদের জন্য আলাদাভাবে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। ফলে সর্বাধিক ৭৫,০০০ বা দুই পক্ষই ষাটোর্ধ্ব হলে ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া সম্ভব। এর মধ্যে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত থাকে।

ধারা ১০(১৪): বাড়িভাড়ার ছাড় (এইচআরএ)

ভাড়াবাড়িতে থাকলে, বাড়িভাড়ার ওপর এইচআরএ ছাড় পাওয়া যায়। ছাড়ের পরিমাণ নির্ধারিত হয়: প্রাপ্ত এইচআরএ, বেতনের ৫০ শতাংশ (মেট্রো শহরে) বা ৪০ শতাংশ (অ-মেট্রো শহরে), ও পরিশোধিত ভাড়া – মূল বেতনের ১০ শতাংশের মধ্যে সর্বনিম্ন পরিমাণ অনুযায়ী। বার্ষিক ১ লক্ষ টাকার বেশি ভাড়া হলে, বাড়িওয়ালার প্যান নম্বরসহ রসিদ জমা দিতে হয়।

ধারা ২৩৪এফ: দেরিতে রিটার্ন জমার জন্য জরিমানা

এই ধারায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের পরে রিটার্ন জমা দিলে জরিমানা দিতে হয়—যদি আয় ৫ লক্ষ টাকার কম হয়, তবে ১,০০০ টাকা এবং আয় ৫ লক্ষের বেশি হলে ৫,০০০ টাকা জরিমানা। বারবার দেরিতে জমা দিলে আরও সুদ ও জরিমানা ধার্য হয়, যা ধারা ২৩৪এ এবং ২৩৪বি-তে উল্লেখ আছে। এছাড়া, ভবিষ্যতের রিফান্ড বা লোকসান বহন করার সুবিধাও হারাতে পারেন করদাতা।

এই ধারাগুলি ভালোভাবে বুঝে নিয়ে কাজে লাগালে কর সাশ্রয় যেমন সম্ভব, তেমনি সময়মতো রিটার্ন জমা দিয়ে জরিমানাও এড়ানো যায়।

বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখেন ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিকরা। সমস্ত তথ্য যাচাই করে তবে বাংলাবিজে প্রতিবেদনগুলি লেখা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.