ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৭০৫ বিলিয়ন ডলার (৫,৮৮,৫৮,৮৬৫ কোটি টাকা) অতিক্রম করেছে, যা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রিজার্ভ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২৭ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে এই রেকর্ড রিজার্ভ অর্জিত হয়। দেশের শেয়ার এবং বন্ডে বিদেশি বিনিয়োগের ফলে এই রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়েছে।
রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) এই মজুদ ব্যবহার করে টাকার দামের স্থিতিশীলতা বজায় রাখছে, যাতে মুদ্রার মূল্যে বড় ধরনের অস্থিরতা না ঘটে। যদিও টাকা এখনও রেকর্ড নিম্নমূল্যের কাছাকাছি অবস্থান করছে, রিজার্ভের এই মজুদ আরবিআইকে মুদ্রা বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করছে।
ব্যাঙ্ক অফ আমেরিকার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মার্চ নাগাদ এই রিজার্ভ ৭৪৫ বিলিয়ন ডলার (৬,২১,৯৭,১৫০ কোটি টাকা) পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশ্লেষক রাহুল বাজোরিয়া ও অভয় গুপ্তা ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদনে বলেন, “আরবিআই বৃহত্তর রিজার্ভ বজায় রাখতে আগ্রহী, যাতে বাহ্যিক ঝুঁকির বিরুদ্ধে সুরক্ষা তৈরি করা যায়। অন্যান্য উদীয়মান বাজারগুলির তুলনায় ভারতের রিজার্ভ বেশ শক্তিশালী।”
এই রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে ব্যালান্স-অফ-পেমেন্ট উদ্বৃত্ত এবং সংকুচিত বর্তমান-অ্যাকাউন্ট ঘাটতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে জোর দিয়েছেন, কারণ এটি বাজারের অস্থিরতার সময় দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে সহায়ক।
বাজোরিয়া ও গুপ্তা আরও উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক ইউএসডি/আইএনআর (ডলার/টাকার) বিনিময় হারের ওঠানামা টাকার জন্য কিছুটা প্রশংসার সুযোগ তৈরি করেছে। তারা লিখেছেন, “উচ্চতর অস্থিরতার মধ্যেও, রিজার্ভ সংগ্রহের লক্ষ্যে আরবিআই অব্যাহত থাকতে পারে এবং মুদ্রার প্রতিযোগিতামূলকতা বজায় রাখতে পারে।”
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা এবং বিদেশি বিনিয়োগের প্রভাবে বড় পতন শেয়ার বাজারে, আপনার কী করণীয়
এদিকে, ইরান-ইজরায়েলের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের পর মধ্যপ্রাচ্যে উদ্ভূত উত্তেজনার কারণে তেলের দাম বেড়ে গেছে। এই সংঘাত তেলের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে, যা বিশ্বজুড়ে সুদের হার সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি, বিশেষত ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ, যখন তাদের আর্থিক নীতিগুলিতে শিথিলতা আনতে শুরু করছে, তখন আরবিআইও কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। যদিও ভারতের অর্থনীতি স্থিতিশীলতা দেখিয়েছে, বাহ্যিক ঝুঁকি, বিশেষত ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, প্রবৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে, আরবিআই ভবিষ্যতের নীতি সিদ্ধান্তে সতর্কভাবে অগ্রসর হতে পারে।
যদিও ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখনও দৃঢ়, বিশ্ব বাজরে অনিশ্চয়তা এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপ থেকে কিছু ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি বর্তমানে হ্রাস পাচ্ছে, তবে খাদ্য ও জ্বালানির দাম এখনও আরবিআইয়ের উদ্বেগের বিষয়, যা ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।