বিবি ডেস্ক : কপালে ভাঁজ ফেলার মতো খবর শোনাল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আর্থিক স্থায়িত্ব প্রতিবেদন (Financial stability report)। দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কের করা ঋণের জন্য ম্যাক্রো স্ট্রেস টেস্টে দেখা গিয়েছে ব্যাঙ্কের গ্রস নন পারফর্মিং অ্যাসেটের (NPA) পরিমাণ আগামী বছর মার্চে এ বছরের তুলনার প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে।
বতর্মান পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে তাহলে এনপিএ এ বছর মার্চে ৮.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২১ সালে মার্চে ১২.৫ শতাংশ হতে পারে। শুধু তাই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে দেশের অর্থনীতির পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয় তবে তা বেড়ে ১৪.৭ শতাংশ হতে পারে।
কোভিড পূর্ব পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্কের নন-পার্ফমিং অ্যাসেটকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু কোভিড ১৯ কারণে দেশের আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। তার ফলে আবার নতুন করে নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে এনপিএ।
কাকে বলে এনপিএ?
নন পারফর্মিং অ্যাসেট বলতে বোঝায় ব্যাঙ্কগুলি যে লোন বা অ্যাডভান্স দিয়ে থাকে তার আসল বা সুদ ৯০ দিন যদি অনাদায়ী হয়ে পড়ে থাকে, তাকেই ব্যাঙ্কের ভাষায় এনপিএ বা নন পারফর্মিং অ্যাসেট বলে।
২০১৪ সাল থেকে দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক উদ্যোগ নেয় সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির সম্পদের গুণমান পর্যালোচনা করার।
করোনা প্রাদুর্ভাব রুখতে চালু হয় লকডাউন। লাগাতার লকডাউনে জেরে স্তব্ধ হয়ে যায় দেশের অর্থনীতি। সেই পরিস্থিতি কেন্দ্রগুলিকে আবেদন জানায় লকডাউনকালীন ঋণের উপর মোরাটেরিয়াম ঘোষণার জন্য। কেন্দ্রের আবেদন মেনে মোরাটোরিয়ামের ঘোষণা করে ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য ঋণদানকারী সংস্থাগুলি।
এই আগস্ট মাসে ছ’মাসে মোরাটরিয়ামের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। ব্যাঙ্কের খাতায় ১০০ লক্ষ কোটি ঋণের ৪০ শতাংশই বকেয়া পড়ে রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গর্ভনর সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিকে পরামর্শ দিয়েছেন, ‘বাফার তৈরি রাখা এবং পুঁজি সংগ্রহ’— এই দুটি বিষয়ে জোর দিতে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এই দুটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি বাজারে ঋণের সরবরাহ বজায় রাখা এবং ব্যাঙ্কের প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই সমস্ত ব্যাঙ্ক এবং নন-ব্যাঙ্কিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে কোভিড স্ট্রেট টেস্ট করাতে বলেছে। এর ফলে জানা যাবে ব্যাঙ্কগুলির সম্পদের গুণমান, লিকিউডিটি, লাভজনকতা এবং মূলধন পর্যাপ্ততার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
ঋণ এবং অ্যাডভান্সের উপর সুদ থেকে ব্যাঙ্ক আয় করে থাকে। এই আয় থেকে ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের জমা টাকার উপর সুদ দিয়ে পারে। এছাড়া ঋণপ্রদান চক্রকে চালু রাখার জন্যও ব্যাঙ্কের নন পারফর্মিং অ্যাসেট পরিমাণ কমে আসাটা গুরুত্বপূর্ণ। এনপিএ ক্রমশ বাড়তে থাকলে ভবিষ্যতে ব্যাঙ্কগুলি জমা টাকার উপর সুদের পরিমাণ কমাতে বাধ্য হবে।
সূত্র: বিজনেস টুডে